গুয়াহাটি: দেবী সতীর ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম শক্তিপীঠ কামাখ্যা মন্দির। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার উপরে কামাখ্যা মন্দির অসমের রাজধানী গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত। তন্ত্রমন্ত্রের স্পর্শ সংবলিত মন্দির সম্পর্কে অনেক প্রাচীন ও অলৌকিক কথা প্রচলিত রয়েছে। পৌরাণিক মতে, ভগবান বিষ্ণু যখন চক্র দিয়ে সতীর দেহকে টুকরো টুকরো করেছিলেন, তখন এই নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যাধামে দেবীর যোনি কেটে পড়ে।
প্রত্যেক বছর অম্বুবাচির তিন বা চারদিন মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে। এ সময় পূজা-পার্বণ সমস্ত কিছু বন্ধ থাকে। বলা হয়, মা কামাখ্যা এ সময় রজঃস্বলা হন। এ সময় শক্তিপীঠ কামাখ্যা ধামে আধ্যাত্মিক শক্তি অনেক বেড়ে যায়। তাই অম্বুবাচি উপলক্ষে আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য সাধুসন্ত ভক্ত এসে উপস্থিত হন কামাখ্যা ধামে।
অম্বুবাচি উৎসব কৃষির সঙ্গেও যুক্ত। ফলে এই উৎসবকে এখানকার মানুষজন খুব শুদ্ধাচারে নিয়মনীতির মাধ্যমে উৎসাহের সঙ্গে পালন করেন। অম্বুবাচি মেলাকে কুম্ভ মহাকুম্ভের সঙ্গেও তুলনা করেন অনেক সাধুসন্ত। অম্বুবাচি শব্দের অর্থ জল বৃদ্ধি। সূর্যদেব আদ্রা নক্ষত্রে গমন করলে বর্ষাকাল শুরু হয়। সূর্যদেব আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পদে অবস্থানকালে অর্থাৎ রাশিচক্রের মিথুন রাশির ৬ ডিগ্রি ৪০ মিনিট থেকে ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত (অর্থাৎ ৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট) সময়কালে ধরিত্রী ঋতুমতী হন। ধরিত্রী-মা সিক্ত এবং উর্বরা হয়ে ওঠেন। শাস্ত্রমতে এই সময়কাল অম্বুবাচি।
অন্যদিকে, ১৯৭০ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশনায় প্রতি বছর ২২ এপ্রিল দিনটিকে সারা পৃথিবীতে ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁরা বলেন, সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয়রাও কিন্তু নিজেদের মতো করে ধরিত্রী দিবস পালন করে আসতেন অম্বুবাচি বা অম্বাবতী বা অমাবতী নাম দিয়ে। বেদ-পুরাণ সর্বত্রই বসুন্ধরার উল্লেখ করা হয়েছে, ধরিত্রী মাতা বলে। শুধু তা-ই নয়, আর্যদের আগমনের অনেক আগে থেকেই অস্ট্রিক সভ্যতার মানুষেরা বিভিন্ন নামে ধরিত্রী মাতার পুজো করে এসেছেন এবং এখনও করছেন।