দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ কার্তিক মাসকে অত্যন্ত শুভ বলে মানা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস, এই মাসের পূর্ণিমায় চারমাসের যোগ নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন জগতের পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু। আর এই সময়েই পুজো হয় দেবসেনাপতি কার্তিকের। হুগলির চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া কাটোয়া অঞ্চলের কার্তিক পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। এছাড়া বাংলার গণিকাসমাজের কার্তিকপুজোও বিশেষ জনপ্রিয়।বাংলা পঞ্জিকা মতে এবছর কার্তিক পুজো ৩০ শে কার্তিক, অর্থাৎ শনিবার । ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, কার্তিক পুজো পড়েছে ১৬ নভেম্বর । চলতি বছর কার্তিক পুজোর শুভ সময় কখন জেনে নিন
দিনক্ষণ
কার্তিক পূর্ণিমা পড়েছে ১৫ নভেম্বর সকাল ৬ টা ১৯ মিনিটে
তিথি শেষ হচ্ছে ১৬ নভেম্বর রাত ২ টো ৫৮ মিনিটে
শুভ সময়
১৬ নভেম্বর - ভোরবেলা ৪ টে ৫৫ মিনিট থেকে ৬ টা ২৪ মিনিট
পুজোর দিনক্ষণ জানা গেল । কিন্তু, কার্তিক পুজো নিয়ে নানারকম মিথ, কাহিনিও প্রচলিত রয়েছে । তবে, জানেন কি কার্তিকের ছ'টা মাথা । দশ মাথার জন্য রাবণকে যেমন দশানন বলা হয়,তেমনই কার্তিককে ষড়ানন । নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী । জেনে নেওয়া যাক
পার্বতী পুত্র কার্তিক । দেবতাদের সেনাপতি, মহাপরাক্রমশালী যোদ্ধা। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, তারকাসুরকে বধ করতে গিয়ে যখন দেবতারা হিমশিম খাচ্ছেন, সেইসময় জন্ম কার্তিকের । তখন সতীর দেহত্য়াগের পর কঠিন তপস্যায় শিব । সেই সুযোগে তারকাসুরের অত্যাচার শুরু হয় । তারকাসুরের হাত থেকে বাঁচার জন্য দেবতারা একজন দেবসেনাপতির খোঁজ করছিলেন। কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়েন দেবতারা । ছুটে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে । পুত্রসন্তানের অনুরোধ করেন । সেইসময় পার্বতীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করেন শিব । আর শিব ও শক্তির মিলনে এক অগ্নিপিণ্ডের সৃষ্টি হয়। সেই অগ্নিপিণ্ড গঙ্গানদীতে গিয়ে পড়ে।
অগ্নিপিন্ডটি ৬ জন কৃত্তিকার গর্ভে ভাগ হয়ে যায় । জন্ম হয় ছয় মাথাবিশিষ্ট কার্তিকের । পরাক্রমশালী কার্তিক অবশেষে তারকাসুরকে বধ করেন । জানেন কি কার্তিকের ৬টি মাথা রিপুর প্রতীক । বাংলা তো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছয় মাথা কার্তিকের পুজোর রীতি রয়েছে ।
পার্বতী পুত্র কার্তিকের বিভিন্ন নাম। যেমন গুহ, পাবকি, মহাসেন, কুমার, গাঙ্গেয়, বিশাখ, নৈগমেয়, কুক্কুটধ্বজ । কেউ কেউ বলেন কার্তিক চিরকুমার, তাঁর গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল হলুদ, বাহন ময়ূর। কার্তিকের হাতে থাকে বর্ষা তীর ধনুক। অর্থাৎ তিনি বীর সেনাপতি। আবার কোথাও কোথাও বলা আছে, ব্রহ্মা এবং সাবিত্রীর সন্তান দেবী ষষ্ঠী কার্তিকের পত্নী।
কার্তিক পুজোকে কেন্দ্র করে নানারকম বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সমাজে । প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দেব সেনাপতি কার্তিকের আরাধনায় পুত্র সন্তান লাভ হয় । তাই, নবদম্পতিদের বাড়িতে কার্তিক ঠাকুর ফেলার রীতি রয়েছে ।এছাড়া, কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবী ষষ্ঠী। সন্তানলাভের আশায় ষষ্ঠীর পুজো করা হয় । সেক্ষেত্রে, সন্তান লাভের আশায় কার্তিকেরও পুজো করা হয় ।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অতি মহাসমারোহে কার্তিক পুজো করা হয় । হুগলির চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, কাটোয়ায় কার্তিক পুজো বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তবে, বাংলার বাইরেও দেশের বিভিন্ন শহরে কার্তিক পুজোর রীতি রয়েছে । তবে, অন্য নামে পূজিত হন দেবতা ।