Festival and celebrations

6 hours ago

Digha Rath Yatra 2025: উলটো রথে স্বাস্থ্যসুরক্ষা আঁটোসাঁটো, প্রস্তুত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স – রাজ্যের উদ্যোগে বাড়ছে আস্থা!

Bengal govt to keep air ambulance in Digha during Rath Yatra on July 5
Bengal govt to keep air ambulance in Digha during Rath Yatra on July 5

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:  রথযাত্রার উৎসবে ভক্তদের ঢল নেমেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। শ্রীজগন্নাথের মাসির বাড়ি সফর যেমন আবেগে ভরপুর, তেমনই তাঁর ফিরতি যাত্রা—উলটো রথও ভক্তদের কাছে সমান তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু শুধুই আধ্যাত্মিক  আবেগ নয়, এই বিশাল জনসমাগমের মধ্যে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব আরও বেশি। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এবারও দিঘায় জগন্নাথদেবের উলটো রথ উপলক্ষে রাজ্য সরকার নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ—তৈরি রাখা হচ্ছে এয়ার  অ্যাম্বুল্যান্স। উৎসবের দিন ভিড়ের চাপে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যেন দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থাপনা। রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ৫ই  জুলাই, উলটো রথের দিন একটি হেলিকপ্টারকে স্ট্যান্ড বাই হিসেবে রাখা হবে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৪ঠা জুলাই দুপুর থেকেই হেলিকপ্টার প্রস্তুত অবস্থায়  থাকবে বলে প্রশাসনিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।

এই উদ্যোগের অনুপ্রেরণা অবশ্য এসেছে গঙ্গাসাগর মেলার অভিজ্ঞতা থেকে। প্রতিবছরই লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে সমবেত হন পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে। আর সেই বিশাল জনসমাগমে যাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি  সামলানো যায়, তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স মোতায়েন করা হচ্ছে। সেই মডেলই এবার  দিঘার রথযাত্রাতেও প্রয়োগ হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এবছরের রথযাত্রায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত  হয় বিশাল আকারের উৎসব। সেই উপলক্ষে ২৫ থেকে ২৮শে জুন পর্যন্ত দিঘায় একটি হেলিকপ্টার স্ট্যান্ড বাই রাখা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনের অনুমান, এই ব্যবস্থায় দ্রুততা ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে ভক্তদের আস্থা ও  নিরাপত্তার অনুভূতি আরও দৃঢ় হয়েছে। 

নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। উলটো রথ, শ্রাবণী মেলা ও মহরমের মতো বড় আকারের অনুষ্ঠানগুলিকে ঘিরে যাতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও  ঘাটতি না থাকে, সেই লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে এই পরিকল্পনা। স্বাস্থ্য দফতর, পুলিশ প্রশাসন, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে কো-অর্ডিনেশন কমিটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এধরনের  আকাশপথে চিকিৎসা পরিষেবা রাজ্যের পঠন-পাঠন কিংবা উন্নয়ন ক্ষেত্রের বাইরেও প্রশাসনিক পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রগতিশীল করে তোলে। কারণ শুধুমাত্র সমস্যা তৈরি হলে পদক্ষেপ নয়, আগাম সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করাটাই প্রশাসনের দক্ষতার অন্যতম চিহ্ন।

জানা গিয়েছে, হেলিকপ্টারে একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফ থাকবেন। যেকোনও জরুরি মুহূর্তে, রোগীকে দিঘা থেকে সরাসরি কলকাতার সরকারি বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা যাবে। বিশেষ করে যাঁদের হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও জটিল শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা বেশ কার্যকরী হতে পারে।  তবে শুধু এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সই নয়, রাজ্য সরকার রথযাত্রা কেন্দ্রিক এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত  অ্যাম্বুল্যান্স, অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির, পিয়াউ ও রিলিফ ক্যাম্পের ব্যবস্থাও করেছে। জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট, যাতে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা অবিলম্বে মিলতে পারে। ভিড়  সামলাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘রেসপন্স টাইম’ কমিয়ে আনা। দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা ঘটলে কীভাবে দ্রুত রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই অভিনব পদক্ষেপ। দিঘা হোটেল  মালিক সংগঠন, স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এবং পুর প্রশাসনও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের মতে, সরকারের এই সচেতন ও প্রগতিশীল পদক্ষেপে শুধু নিরাপত্তাই নয়, রাজ্যের পর্যটন শিল্পের প্রতি আস্থাও  বাড়বে বহুগুণ।

উল্লেখ্য, দেশের বহু রাজ্যে এখনো পর্যন্ত বড় ধর্মীয় উৎসবে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবহারের নজির খুব একটা দেখা যায় না। সেদিক থেকে বাংলার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পথিকৃৎ। এমনকী প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা, যেখানে  পুরী রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেও এমন পূর্ণাঙ্গ এয়ার মেডিক্যাল প্ল্যান আপাতত নেই। এই প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, মানুষের স্বাস্থ্যের প্রশ্নে কোনও ঝুঁকি নেওয়া  যাবে না। তাই আগেভাগে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আমরা চাই প্রতিটি ভক্ত যেন উৎসবে যোগ দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।” রথযাত্রার উৎসব কেবল ধর্মীয় আবেগ নয়, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক  অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এই আস্থার উৎসবে সরকারি সুরক্ষা বলয় যে দিন দিন আরও বলিষ্ঠ হয়ে উঠছে, তা নিঃসন্দেহে রাজ্যবাসীর কাছে আশার বার্তা।

You might also like!