দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ইলন মাস্ককে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকা থেকে মাস্ককে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন একদা সুহৃদ ট্রাম্প। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের প্রাক্তন উপদেষ্টা ইলন মাস্ককে আমেরিকায় ব্যবসা চালানো বন্ধ করে দেওয়ার সতর্কতা দিয়ে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, টেক সাম্রাজ্যের অধিপতিকে এবার দোকান বন্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাততাড়ি গোটাতে হবে। ভর্তুকি না পেলে ব্যবসা বন্ধ করে তল্পিতল্পা গুটিয়ে মাস্ককে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হত।
ট্রাম্প যেটিকে ‘বড় সুন্দর বিল’ বলে ব্যাখ্যা করছেন, সেটি আসলে আমেরিকায় কর এবং ব্যয় সংকোচনের জন্য তৈরি একটি অর্থবিল। তবে শুরু থেকেই এই বিলের ঘোর বিরোধী মাস্ক। ওই বিল নিয়ে চূড়ান্ত ভোটাভুটির আগে সোমবার (স্থানীয় সময় অনুসারে) মার্কিন সেনেটে আলোচনা হয়। তার পরেই বিলের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়িয়ে সমাজমাধ্যমে টেসলাকর্তার দাবি, দ্বিদলীয় রাজনৈতিক শক্তির বাইরে তৃতীয় বিকল্প তৈরি করতে হবে আমেরিকাকে।
সমাজমাধ্যমে মাস্ক লেখেন, “যদি ব্যয় সংক্রান্ত এই খ্যাপাটে বিলটি পাশ হয়, তবে পরের দিনই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হবে। আমাদের দেশে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দলের বাইরে একটি বিকল্পের প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের কণ্ঠস্বর খুঁজে পায়।” কিছু সময় পরে ট্রাম্পও নিজের সমাজমাধ্যম হ্যান্ডলে মাস্ককে নিশানা করেন। তাঁর দাবি, মাস্ক যে পরিমাণ ভর্তুকি পেয়েছেন, তা হয়তো অতীতে আর কেউ পাননি। এই ভর্তুকি না-পেলে মাস্ককে হয়ত ব্যবসা বন্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হবে। বস্তুত, মাস্ক আমেরিকার নাগরিক হলেও জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মাস্ককে খোঁচা দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের আরও দাবি, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তাঁকে সমর্থন করার অনেক আগে থেকেই মাস্ক জানতেন যে তিনি বৈদ্যুতিন গাড়ির বিরোধী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সমাজমাধ্যমে লেখেন, “বৈদ্যুতিন গাড়ি ঠিক আছে। কিন্তু সকলকে এই গাড়ি কিনতে বাধ্য করা উচিত নয়।” ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেলে ট্রাম্পের সংস্থার কী পরিণতি হতে পারে সে কথা উল্লেখ করে ট্রাম্পের বক্তব্য, “আর কোনও রকেট উৎক্ষেপণ, উপগ্রহ বা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন থাকবে না এবং আমাদের দেশের ভাগ্য ফিরবে। হয়তো আমাদের সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর (ডিওজিই)-কে এটি ভাল ভাবে, কঠোর ভাবে দেখার জন্য বলা উচিত। আমাদের অনেক অর্থ বাঁচাতে হবে।”
ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে ডিওজিই-র মাথায় বসেছিলেন মাস্ককে। তবে সম্প্রতি দু’জনের মনোমালিন্যের জেরে আমেরিকার প্রশাসনের ওই পদ থেকে সরে যান মাস্ক। ট্রাম্প এবং মাস্কের মধ্যে সংঘাত যখন চরমে উঠেছিল, তখনও টেসলাকর্তার মুখে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামটি শোনা গিয়েছিল। ওই সময় সমাজমাধ্যমে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করেছিলেন মাস্ক। সেখানে তিনি প্রশ্ন রাখেন যে, আমেরিকায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় হয়েছে কি না। মাস্কের এই প্রশ্নের উত্তরে ইতিবাচক উত্তর দেন ৮০ শতাংশ মানুষ। আর ভোটের সেই ফলাফল সম্বলিত পোস্ট শেয়ার করে মাস্ক লিখেছিলেন, ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’। তা নিয়ে পরবর্তী কালে মাস্ক আর কিছু খোলসা না-করলেও অনেকেই মনে করছিলেন, নতুন দলের নামকরণেই ওই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন তিনি।
টেসলাকর্তা আগেই জানিয়েছিলেন, ওই বিল আইনে পরিণত হলে বহু মানুষের চাকরি চলে যাবে। এই বিলটি রিপাবলিকান পার্টির ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’র সমান বলে মনে করেন তিনি। সোমবার সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে মাস্কের দাবি, এই বিলটি আমেরিকার ঋণকে রেকর্ড পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দিতে পারে। এখন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় এসেছে, যারা সত্যিই সাধারণ মানুষের কথা ভাববে।