দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- দুর্গাপুজো শেষ হলে দীপাবলি, আর দীপাবলির পালা সাঙ্গ হলে এসে যায় ছটপুজো। মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশে পালিত হয় এই ধর্মীয় উত্সব। ছট মানে 'ছট মাইয়া'। সূর্যকেই পুজো করা হয় ছট পুজোয়। কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যার পর ষষ্ঠীতে এই পুজো হয়। এখন কিন্তু ছট পুজো উদযাপন শুধু বিহারি সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ধর্মের মানুষ এখন এই উৎসবকে আপন করে নিয়েছেন।
ছট উৎসবের সময় মহিলারা নাক পর্যন্ত লম্বা সিঁদুর লাগান। ছট পুজোয় লম্বা সিঁদুর লাগানোর পিছনেও একটা বিশ্বাস আছে। এই বিশ্বাস অনুসারে, যে মহিলা চুলে সিঁদুর লুকিয়ে রাখেন, তার স্বামী সমাজে লুকিয়ে থাকে এবং উন্নতি করতে অক্ষম হয় এবং একই সাথে সে স্বল্পায়ুও হয়। এ কারণে ছটের সময় নারীরা লম্বা সিঁদুর লাগালে স্বামীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে তার সম্মানও বাড়ে বলে বিশ্বাস করা হয়।
রামায়ণ এবং মহাভারত দুই মহাকাব্যেই ছট পুজোর উল্লেখ রয়েছে। সূর্যবংশের সন্তান হওয়ার কারণে শ্রীরামচন্দ্র নিয়মিত ছট পুজো করতেন। বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যা ফেরার সময় রাম ও সীতা সূর্যের উদ্দেশ্যে পুজো ও উপবাস করেন। সেই থেকেই ছট পুজোর সূচনা বলে মনে করা হয়। আবার মহাভারত অনুযায়ী সূর্য ও কুন্তীর পুত্র কর্ণ। কথিত আছে কর্ণ এই সময় সূর্যের আলোয় আবক্ষ জলে দাঁড়িয়ে দরিদ্রদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেছিলেন। আবার নিজেদের রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দ্রৌপদী ও পাণ্ডবরাও এই পুজো করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে।
ছট পুজো হল আদতে সূর্য এবং তাঁর পত্নী ঊষা ও প্রত্যুষার পুজো। মোট চার দিন ধরে চলে এই পুজো ৷ বছরে দু-টি ছট হয়, একটা হয় চৈত্র মাসে, অন্যটা কার্তিক মাসে ৷ তবে কার্তিক মাসে যে ছট হয়, সেটিই বড় করে পালন করা হয়। পুজোর নিয়ম মেনে প্রথম দিন মহিলারা একবার কুমড়োর সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে ১২ ঘণ্টা উপবাসে থাকেন। তারপর খাবার খেয়ে আবার ২৪ ঘণ্টা উপবাসে থাকেন। এরপর আরও একবার খাবার খেয়ে ফের ৩৬ ঘণ্টা উপবাসে থেকে জলাশয় অথবা নদীতে গিয়ে আবক্ষ জলে দাঁড়িয়ে সূর্যের কাছে নিজের প্রার্থনা প্রকাশ করেন। ছট পুজোর কোনও মন্ত্র নেই। যার যে ভাষায় সূর্যের কাছে মনোবাসনা জানানোর ইচ্ছে, তিনি সেই ভাষাতেই বলবেন মনে মনে।