দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ার রঙিন জগতে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম! আর সেই প্রেমের টানেই ঘর ছাড়ছেন শত শত গৃহবধূ, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত পুলিশ জেলার বিশেষ রিপোর্টে। এত বছর পর তারই যেন বাস্তব ছবি দেখা যাচ্ছে বারাসতে। এখানে অবশ্য শ্রেণি বৈষম্যের ব্যাপার নেই। তবে প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর মতো রোমান্টিকতা যেমন আছে, তেমনই রয়েছে ঘর ভাঙার যন্ত্রণা। ভাবছেন তো, প্রেম পূর্ণতাই পেল, তবে যন্ত্রণা কীসের? সত্যিটা হল, স্বামীর সঙ্গহীনতার পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছেন গৃহবধূরা। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ মাসে অন্তত ৫০০ জন এভাবে সংসার ভেঙে পালিয়েছেন!
কেউ কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। কেউ আবার কর্মক্ষেত্রে এতটাই ব্যস্ত যে সংসারে সময় দিতে পারেন না। দাম্পত্যের রসায়নটাই ঠিকমতো জমাট বাঁধছে না। জীবনে তৈরি হচ্ছে বিস্তর ‘ফাটল’। আর সোশাল মিডিয়ার দৌলতে সেই ‘ফাটল’ দিয়েই ঢুকে পড়ছে বহু ভারচুয়াল ‘বন্ধু’। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, পরকীয়া। দিনের বেশিরভাগ সময়ে সেই ভারচুয়াল প্রেমই স্বপ্ন দেখাচ্ছে সুন্দর দাম্পত্যের। পরিণতি, স্বামীসঙ্গহীনতার অভিযোগ তুলে প্রেমিকের হাত ধরে অন্যত্র ঘরবাঁধার সংকল্প নিয়ে বাড়ি ছাড়ছেন নতুন তাঁরা। তখন বিয়ের আর কতই বা বয়স হবে? বড়জোর দু থেকে তিন বছর। এদিকে স্ত্রীদের রাতারাতি গৃহত্যাগ, উধাও হয়ে যাওয়ায় স্বামীরা বাক্যিহারা! কিছুই বুঝতে পারছেন না। ফলে থানার দ্বারস্থ হতে স্ত্রীকে ঘরে ফেরাতে।
উত্তর ২৪ পরগনার শুধু বারাসত পুলিশ জেলাতেই এমন ঘটনার সংখ্যাটা চোখ কপালে ওঠার মতো। গত ৫ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০০ জন গৃহবধূ। সেখানে কিশোরী নিখোঁজের ঘটনার সংখ্যাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যদিও তাদের উদ্ধারে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে বারাসত পুলিশ জেলার প্রতিটি থানা। নিখোঁজদের উদ্ধার করতে অফিসাররা মরিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোন নির্ভরতা, একদিকে যেমন সাইবার অপরাধের ফাঁদে ফেলছে মানুষকে, তেমনই বাড়াচ্ছে পরকীয়া সম্পর্ক। পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গত পাঁচমাসে মোট ৫৩৬ জন যুবতী নিখোঁজ হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই গৃহবধূ। বাকিরা অবিবাহিতা। গৃহবধূদের কেউ পালিয়েছেন স্বামীর পরিচিত কোনও ব্যবসায়ীর সঙ্গে, কেউ ঠিকাদার, আবার কেউ বা অন্য কোনও যুবকের হাত ধরে। বধূদের কারও আবার সন্তানও আছে বাড়িতে।
পুলিশের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে গৃহবধূদের হদিশ পাওয়ার গেলেও উদ্ধার করতে গেলে, তাঁরা ফিরতে চাইছেন না। স্পষ্ট বলছেন, ”আমরা প্রাপ্তবয়স্ক। জীবনের ভালোমন্দ আমরা নিজেরাই বুঝে নেব।” দেখা যাচ্ছে, যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত বাড়ির মহিলারাই এতে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই স্বামীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে অফিসারদের কাছে কাতর আর্জিও জানাচ্ছেন। কিন্তু ‘ঘরের লক্ষ্মী’রা আর ঘরে ফিরতে নারাজ।