দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:বাঙালির জীবনে দুপুরের ভাতঘুম যেন এক অলিখিত অভ্যাস। খাওয়াদাওয়ার পর শরীর একটু শিথিল হয়ে এলে, চোখে নামে ঘুম। তবে আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই অভ্যাস যদি মাত্রাছাড়া হয় বা ঘুমের সময়সূচি যদি অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তাহলে তা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এই ঘুমের অনিয়ম মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুমান, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। বিশেষ করে যারা রাতে ঠিকঠাক ঘুমোন না এবং সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দিনে অনেকটা সময় ঘুমোন, তাঁদের শরীরের জৈবিক ঘড়ি (বডি ক্লক) পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, এমনকি স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কোন তিন ধরনের ঘুম বিপদর সঙ্কেত দেয়?
১।দীর্ঘ ঘুম (আধ ঘণ্টার বেশি): গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্রায়শই ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুমোন, তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও তাঁদের বেশি।
.২।অনিয়মিত ঘুম: দিনের যে কোনও সময়ে ঘুম, রোজ ঘুমের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন, ইত্যাদির উপর মৃত্যুর হার নির্ভরশীল। এ সবই সার্কাডিয়ান ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে। স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। বিপাকের সমস্যা বাড়াতে পারে। হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
.৩।দুপুরে গভীর ঘুম (বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টে): স্বাস্থ্যকর রুটিন মেনে চলার পরেও যাঁরা মাঝে মাঝে বেলার দিকে অথবা বিকেলের শুরুতে গভীর ঘুমে চলে যান, তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
চেনলু গাও বলছেন, এমন ‘বিপজ্জনক’ ঘুমের ধরন আসলে নানাবিধ রোগের ইঙ্গিত দেয়। রাতে ঘুমের অভাব বা সার্কাডিয়ান ছন্দের বিচ্যুতি, হার্টের রোগ, হজমের অসুখ ইত্যাদি। গাওয়ের দাবি, এ কেবল অনুমানের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। ২০২২ সালে ৩,৬০,০০০ প্রাপ্তবয়স্কের উপর একটি সমীক্ষা হয়েছিল, যা প্রকাশিত হয়েছিল ‘হার্ভার্ড হার্ট লেটার’-এ। দেখা গিয়েছে যে, ঘন ঘন যে কোনও সময়ে ঘুমোনোর ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ১২ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। একই ভাবে, দীর্ঘ, অনিয়মিত ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স, নির্দিষ্ট স্নায়বিক রোগ দেখা দিতে পারে।
স্বল্পদৈর্ঘ্যের ঘুম কি একেবারে বাদ দিয়ে দিতে হবে?
ছোট ছোট ঘুম বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন না গবেষকেরা। বরং তাঁরা স্মার্ট ঘুম-এর প্রচার করছেন। কী সেটি?
* ছোট ছোট ঘুম: ১৫-৩০ মিনিটের ঘুম ক্ষতিকারক নয়। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাওয়ার ন্যাপ’।
* ধারাবাহিক প্রয়োজন: প্রতি দিন একই সময়ে ঘুমোলে সার্কাডিয়ান ছন্দ বজায় থাকে।
* তাড়াতাড়ি ঘুমোনো: বিকেল ৩টের আগে ঘুমোন। তাতে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে না।
নিজেকে পরীক্ষা করুন: ঘন ঘন বা দিনের বেলায় দীর্ঘ ক্ষণ ঘুমোনো কি অন্য কোনও রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে? সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন নিয়মিত।