দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় শ্রীকৃষ্ণের প্রেম প্রকৃতির উৎসবই হল রাস। গোপিনীদের সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের আরাধনা হল রাসের মূল বিষয়। পুরাণেও এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন মতেরও উল্লেখ আছে। কোথাও শারদ রাস, আবার কোথাও বসন্ত রাসের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বৈষ্ণবদের কাছে রাস কথাটির অন্য অর্থ বহন করে। শ্রীকৃষ্ণ কার্তিক পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনে যমুনার তীরে গোপিনীদের আহ্বান করেন এবং তাঁদের বিশ্বাস ও ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে সঙ্গদান করেন। তাই বৈষ্ণবদের কাছে রাস আসলে ভক্ত ও ভগবানের মিলন উৎসব। রাসের সঙ্গে নারী-পুরুষের হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচের বিষয়টি যুক্ত। একে বলা হয় 'হল্লীবক' নৃত্য।
বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে রাসের তাৎপর্য্যের উল্লেখ রয়েছে। পদ্মপুরাণে শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্ৰহ্মবৈবর্তপুরাণে বাসন্তীরাস এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদরাসের বর্ণনা আছে। বিষ্ণুপুরাণের মতে কৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে। শ্ৰীধর স্বামী বলেছেন, বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস– 'রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তেনৃত্যবিশেষঃ'। শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, শ্রীকৃষ্ণ যোগমায়াকে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন ৷ শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের ভক্তি দেখে তাঁদের মনোকামনা পূরণ করতে রাসলীলা করেন।
কিন্তু যখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন বলে ভেবে গোপিনীদের মন অহংকারে পূর্ণ হল, তখনই শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে অন্তর্হিত হয়ে যান। তখন গোপিনীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন য ভগবানকে 'একমাত্র আমার' বলে ভেবে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ত্রিজগতের পতি শ্রীকৃষ্ণকে কোনও বন্ধনে আটকে রাখা যায় না। তখন গোপিনীবৃন্দ একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। এইভাবে রাস উৎসবের প্রচলন হয় বলে মনে করা হয়।