চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতিস্থাপনের ওই অস্ত্রোপচার সফল হলে তা হবে পূর্ব ভারতের প্রথম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ঘণ্টা দশেকের লম্বা সেই অপারেশন শেষ হতে হতে আজ, মঙ্গলবার সকাল হয়ে যাওয়ার কথা। দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন সফল ভাবে মিটলেও লিভার প্রতিস্থাপনের অপারেশন শেষ হতে হতেও আজ সকাল হয়ে যাওয়ার কথা। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে স্থিতিশীল রয়েছেন দুই গ্রহীতা।
এমনিতে হার্ট-লাং একত্রে প্রতিস্থাপনের নজির বিরল। পাশাপাশি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস আলাদা ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপিত হলে যে ঝুঁকি থাকে প্রতিস্থাপনের, একযোগে হার্ট-লাং ট্রান্সপ্লান্টে সেই সব ক’টি ঝুঁকিই প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর মধ্যে যেমন রয়েছে নতুন অঙ্গকে শরীরের প্রত্যাখ্যান করা (গ্রাফট রিজেকশন), তেমনই রয়েছে প্রতিস্থাপন পরবর্তী সংক্রমণ। ১৯৯৪ সালে প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইন পাশ হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত যেখানে হাজার দেড়েক হৃদযন্ত্র এবং শ’পাঁচেক ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয়েছে সারা দেশে, সেখানে একযোগে বার্ট-লাং প্রতিস্থাপনের সংখ্যা দেড়শোর গণ্ডিও পেরোয়নি।
সেই সব প্রতিস্থাপনের অধিকাংশই হয়েছে দক্ষিণ ভারতে, বাকিগুলি উত্তর ও পশ্চিম ভারতে। কিন্তু পূর্ব ভারতে এমন নজির এখনও একটিও ছিল না। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে— এনব্লক হার্ট-লাং ট্রান্সপ্লান্ট। এসএসকেএমের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বছর আঠেরোর তরুণ হার্ট-লাং গ্রহীতা জন্মগত হার্টের অসুখের রোগী। সেই কারণেই তাঁর ফুসফুসীয় ধমনি এবং ফুসফুসের ভিতরকার ব্রঙ্কাসগুলিও সংকীর্ণ। তাই পর্যাপ্ত অক্সিজেন জোগাতে অক্ষম তাঁর ফুসফুস। অর্থাৎ, শুধু হার্ট প্রতিস্থাপন হলে পুরো সুস্থ জীবনে ফেরা তাঁর সম্ভব নয়। সে জন্যই একযোগে ফুসফুসও প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
সোমবার যাঁর জোড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হচ্ছে তরুণের বুকে, শুক্রবার পর্যন্ত সেই অরুণ কুলেও অবশ্য সুস্থই ছিলেন দুর্ঘটনার আগে। বিষ্ণুপুরে একটি বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণে গিয়ে রাস্তার পেরোনোর সময়ে একটি স্কুটার তাঁকে সজোরে ধাক্কা মারে। মারাত্মক আঘাত লাগে মাথায়। স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে প্রথমে তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতাল ও পরে পিজি-র অধীন বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেসে (বিআইএন) ভর্তি করা হয়। এমআর বাঙুরেই সিটি স্ক্যানে ধরা পড়েছিল মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণের বিষয়টি। তাই বিআইএনে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।
কিন্তু রাতের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের তাঁকে স্থানান্তর করা হয় এসএসকেএমের ট্রমাকেয়ার সেন্টারে। সেখানে শনিবার প্রৌঢের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয় ঠিকই। কিন্তু তাতেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। রবিবার চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, রোগী ক্রমেই ব্রেন ডেথের দিকে এগোচ্ছেন। তাঁর জামাই সত্যজিৎ মণ্ডল জানান, এর পর থেকেই বাড়ির লোকের কাউন্সেলিং শুরু হয় যাতে ব্রেন ডেথ হলে তাঁরা মরণোত্তর অঙ্গদানে সম্মতি দেন। সোমবার বেলার দিকে ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে সেই সম্মতি দিতে আর দেরি করেনি পরিবার। এর পরেই বছর আঠেরোর তরুণের বুকে এনব্লক হার্ট-লাং ট্রান্সপ্লান্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিভার পান এসএসকেএমেরই এক বছর একান্নর প্রৌঢ়া। দু’টি কিডনির একটি পান এসএসকেএমেই চিকিৎসাধীন বছর আঠাশের এক কিডনি রোগিণী, অন্য কিডনিটি পান কম্যান্ড হাসপাতালের এক বছর বত্রিশের তরুণী।