Country

3 hours ago

Mahakumbh Maghi Purnima 2025: হেথায় দাঁড়ায়ে, এই ভারতের মহামানবের মহাকুম্ভে

Mahakumbh Maghi Purnima 2025
Mahakumbh Maghi Purnima 2025

 

প্রয়াগরাজ, ১২ ফেব্রুয়ারি : বয়স্ক অশক্ত ঠাকুমার হাত ধরে সতর্কভাবে সঙ্গমের দিকে এগিয়ে চলেছেন বিটু শাহ। নেপালের চিতওয়ান মেডিক্যাল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া। নমস্কার করে বললাম, “মন ভালো করে দেওয়া ছবি। ঈশ্বর মঙ্গল করুন”। স্মিতভাষ্যে সপ্রতিভ বিটুর চটজলদি জবাব“ ইট ইজ মাই রেসপনসিবিলিটি”।

আবার, লাঠি হাতের দৃষ্টিহীন স্বামী দুর্গাপ্রসাদকে নিয়ে স্নান করে ফিরছেন সীমা সোয়াইঁ। নমস্কার জানাতেই সীমার প্রতি নমস্কার। এসেছেন ওড়িশা থেকে। প্রশ্নের জবাবে সীমা জানালেন, তিনি পুরী জেলার কাঁসাই ব্লকের মেডিক্যাল অফিসার। অনুরোধ করলেন, তাঁর সচিত্র খবর কোথাও প্রকাশিত হলে সেটি পেতে আগ্রহী।

বিটু, সীমার মতই উদ্দীপনা নিয়ে মহাকুম্ভে এসেছেন ঝাড়খণ্ডের গিরিডি থেকে এক পরিবারের ছ’জন। সঙ্গে গাড়ির চালক। পুণ্যস্নানের পর অনেকের মতো কপালে নিয়েছেন রামনাম, পবিত্র তিলক। আক্ষরিক অর্থেই যেন মহাকুম্ভে জেগে উঠেছে ’পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ’।

বুধবার আলো ফোটার আগে পুণ্যার্থীরা দলে দলে চলেছেন সঙ্গম-স্নানে। কেউ চলেছেন জোড়ায় জোড়ায়। কেউ সপরিবারে। কেউ বা গাঁয়ের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে। প্রকৃতই যেন “হেথায় দাঁড়ায়ে দু-বাহু বাড়ায়ে নমি নর-দেবতারে”।

আর পাঁচটা বড় ধর্মীয় মেলার মত মহাকুম্ভেও হারিয়ে যেতে নেই মানা। সতর্কতার জন্য “উচ্ছল জলধি তরঙ্গে” কোনও দল একটি রজ্জু ধরে চলেছে। গঙ্গাসাগর মেলাতেও কিছুটা ছোট পরিসরে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। মহাকুম্ভে কখনও বা সেই রজ্জু দলের সদস্যদের বেড় দিয়ে ঘেরা। কখনও দলনেতার হাতে বহুবর্ণের, বহু চিহ্ণের পতাকা। সেই পতাকা কখনও গেরুয়া ত্রিকোণ, চতুষ্কোনের, কখনও লাল ত্রিকোণে ধ্যানমগ্ন শিব, কখনও বা নিছকই জাতীয় পতাকা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা একদল মহিলা সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছেন সামনের সতীর্থের শাড়ির আঁচল ধরে।

এর মধ্যেও দলছুট হয়ে যাচ্ছে ৮ থেকে ৮০— নানা বয়সের মানুষজন। মেলাপ্রাঙ্গণে ২৫৪ নম্বর নজরমিনারে পুলিশদিদির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হাফপ্যান্ট পড়া বিল্লু। শঙ্কিত চোখে ওপর থেকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খোঁজ মিলল ওর বাড়ির লোকেদের। এই প্রতিবেদক মুঠোফোনে ধরে রাখলেন বিল্লুর সঙ্গে ওর মা, দাদু-দিদার ছবি।

“বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা”— কত অঞ্চলের কত মানুষ। বেলা সাড়ে দশটায় নজরমিনারের সামনে চিন্তিতমুখে বসে অনিতা কুমারী (বিকাশ)। প্রায় শেষ রাত থেকে দলছুট হয়ে গেছেন মা-বোনের কাছ থেকে। ওঁরা এসেছেন ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে। অনিতা চারহি গ্রামের একটি শিক্ষায়তনের ‘মাদার টিচার’, বি এড পড়ছেন। এই প্রতিবেদককে বললেন, “আমার পার্সটাও হারিয়ে গিয়েছে। সমবেদনা জানালে বললেন, “না, টাকা ছিল না। দুটো ব্যাঙ্ক-কার্ড, আইডি প্রুফ ছিল।”

প্রয়াগের সঙ্গমচত্বরে হঠাৎ হইচই, চেঁচামেচি। ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক ক্রন্দনরত মহিলা ‘পরিস্থিতি নাটকীয়’ করে তুলতে হাতের পলিপ্যাকের মুড়ি, পয়সা সব মাটিতে ছড়িয়ে সামনের পুলিশদলের কাছে হাত জোর করে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন। বলছেন, দেখুন, আমার ব্যাগে কিচ্ছু চোরাই জিনিস নেই। পুলিশদলের দাবি, এরকম কিছু দাগি ছিনতাইবাজ বা কেপমার রয়েছে মেলাচত্বরে। অপকর্মের সঙ্গে সঙ্গে জিনিস সরিয়ে দেয় অন্যত্র। ইতিমধ্যে গলার হার ছিনতাই হওয়া এক মহিলা এসে এই ‘ছিনতাইবাজকে’ শনাক্ত করেন। জোর করে অভিযুক্তকে হাজতে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। সব মিলিয়ে অন্য রং, অন্য ছবি, অন্য প্রাণ প্রয়াগের মহাকুম্ভে মাঘী পূর্ণিমার পুণ্যপ্রভাতে। মনে জেগে ওঠে, “হে মোর চিত্ত, পূণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে--”।



You might also like!