দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- কথায় বলে, শাড়িতেই নারী। বাঙালি মেয়েরা শাড়িতেই নিজেদেরকে দেখতে বেশি পছন্দ করেন। “শাড়ি” শব্দের উৎস সংস্কৃত “শাটী” শব্দ থেকে। ‘শাটী’ অর্থ পরিধেয় বস্ত্র। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করতেন ।
১৯০০ শতকের গোড়ার দিকের কথা। তখনও হিন্দু বাড়ির মেয়েরা পর্দানসীন, অন্দরমহলের চার দেওয়ালই তাঁদের জন্য খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার। তখন তাঁরা শাড়ি পরতেন ব্লাউজ-পেটিকোট ছাড়াই! শুনে অবাক লাগলেও, তা এমনভাবে পরা হত আটপৌরে ধাঁচে। সেই সময় কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরার প্রচলন ছিল না। তবে বর্তমানে এই ধরণের কুঁচি দিয়ে শাড়ি পড়েন মহিলারা।
ঠাকুরবাড়ি আধুনিক ভাবে শাড়ি পরার সাথে এই বাড়ির নাম অতপ্রোতভাবে জড়িত। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় সন্তান, ভারতের প্রথম আইসিএস অফিসার সত্যেন্দনাথ ঠাকুরের যোগ্য সহধর্মিণী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীই একধাক্কায় আধুনিক শাড়ি পরার ধরন প্রচলন করেন। কর্মসূত্রে তাঁর স্বামীকে যেতে হয় বোম্বাই, সঙ্গে গেলেন তিনিও। সেখানে নিত্যদিন নানা লোকের আনাগোনা তাঁর বাড়িতে, স্বামীর কাজের সঙ্গে মানানসই করে তাঁকেও অতিথি আপ্যায়ন করতে হয়, বাড়িতে সায়েব-সুবোদের সঙ্গে বসাতে হয় চায়ের আসর। আর তাঁদের সামনে সনাতনী ঢঙে খালি গায়ে শাড়ি পরে যে বেরনো যায় না, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন তিনি। তাই পার্সি কায়দা আর ইংরেজি ফ্যাশন, দুয়ের সমণ্বয়ে এক আলাদাই শাড়ি পরার ঢং খুঁজে বের করলেন তিনি। পার্সি কায়দায় শাড়ির আঁচল-কুঁচি দিলেন আর সঙ্গে পরে নিলেন ইংরেজি পেটিকোট (যা তখনকার ইংরেজ মহিলারা পরতেন গাউনের নীচে, শেপওয়্যার হিসেবে) এবং জ্যাকেট ব্লাউজ! সেই থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে আধুনিক ভাবে শাড়ি পরার প্রচলন শুরু হয়।