Breaking News
 
AC local: বনগাঁ শাখায় নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকাল, মালদহ রুটে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস! সম্ভাব্য সূচনা ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে Kapil Sharma's cafe: কানাডায় কপিল শর্মার ক্যাফেতে খলিস্তানি হামলা, দায় স্বীকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হরজিত লাড্ডির! Niti Ayog: নীতি আয়োগের রিপোর্টে মানচিত্র বিভ্রাট! মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির পর সরল নীতি আয়োগের ত্রুটিযুক্ত মানচিত্র Shashi Tharoor: ‘গণতন্ত্রের অন্ধকার অধ্যায়’ – ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনায় শশী থারুর! Kolkata Security Breach: ভুয়ো আধার হাতে কলকাতায় বছরভর বাস, ফোর্ট উইলিয়ামে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা, পাকড়াও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী! Mamata Banerjee-Omar Abdullah: বঙ্গসফরে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, মমতার সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক বার্তা!

 

Editorial

1 year ago

Editorial : ৯/১১ হামলার ২২ বছর!আমেরিকার ইতিহাসের এক কালো দিন

World Tread Center (File Picture)
World Tread Center (File Picture)

 

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১, দিনটি আধুনিক মানব সভ্যতার একটি কালিমালিপ্ত দিন ছিল। এই দিনটি আমাদের জাতি এবং বৃহত্তরভাবে বিশ্বে যে প্রভাব ফেলেছিল তা সত্যিই নিন্দনীয়। এই দিনটিতে প্রায় প্রায় ৩,০০০ নিরপরাধ জীবন বিনা কারনেই শেষ হয়ে যায়। এই দিন আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টাওয়ার ধ্বংস এবং পেন্টাগনের ক্ষতি মানব সভ্যতার উপর দানবীয় ও ক্রুর সন্ত্রাসবাদের কঠিন আঘাত টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল মানবিকার সংজ্ঞাকে।সেই দিনের ক্ষত আজ ও বয়ে বেড়াচ্ছে আধুনিক মানব সভ্যতা। 

৯/১১ ঐ দিনের ঘটনা সত্যিই বেদনাদীর্ণ করে হৃদয় কে, ঠিক কী ঘটেছিল ঐ দিনটিতে? ০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। আমেরিকার বুকে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায় ‘টুইনস টাওয়ার্স’। ঐ দিনটিতে আমেরিকার বুকে মোট চারটি বিমান হামলা চালিয়েছিল আল-কায়দার জঙ্গিরা।ঘটনার দিন সকালে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার ১৯ জন জঙ্গি আলাদা আলাদা বিমানবন্দর থেকে চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে। এর পর বন্দুক, বোমা, গোলাবারুদ সঙ্গে নিয়ে চারটি দলে ভাগ হয়ে চেপে বসে সেই বিমানগুলিতে।প্রথম দু’টি বিমান নিয়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ‘টুইন টাওয়ার্সে’ হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই সময়ে বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু বহুতলের মধ্যে দু’টি ছিল টুইন টাওয়ার্স।প্রথম বিমানটি সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর মিনারের ৯৩ তলা থেকে ৯৯ তলার মধ্যে গিয়ে ধাক্কা মারে।ঠিক সাত মিনিট পর অর্থাৎ, ৯টা ৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি নিয়ে আঘাত হানে জঙ্গিরা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ মিনারের ৭৭ তলা থেকে ৮৫ তলার মধ্যে আছড়ে পড়ে সেটি।এই দুই বিমানে মোট ১০ জন জঙ্গি ছিল। দু’টি বিমানে মোট যাত্রী এবং বিমানের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪৭। এই দুই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল মোট ২,৭৬৩ জনের।এর পর দু’ঘণ্টার মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ‘টুইন টাওয়ার্স’ ধুলোয় মিশে যায়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চত্বরের আরও একটি ৪৭ তলা ভবন ভেঙে পড়ে।


অন্য দু’টি বিমান নিয়ে দেশের রাজধানী ওয়াশিংটনে হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা। তৃতীয় বিমানটিতেও ছিল পাঁচ জঙ্গি। যাত্রী এবং বিমানের সদস্যদের মিলিয়ে ৫৯ জন বিমানটিতে ছিলেন।৯টা ৩৭ মিনিটে বিমানটি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের একটি দেওয়ালে। এই ঘটনায় প্রান হারায় মোট ১৮৯ জন।চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার পর তা পেনসিলভেনিয়ার একটি গ্রামে আছড়ে পড়ে ১০টা ৩ মিনিটে। সেই বিমানটিতে চার জন জঙ্গি ছিল। তাদের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছিল আরও ৪০ জনের।এই চার জঙ্গি হামলায় সব মিলিয়ে ৯৩টি দেশের প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আহতও হয়েছিলেন বহু মানুষ।


বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে আগে পার্ল হারবারে আমেরিকার নৌবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছিল জাপানের বায়ু সেনা। তার পর থেকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সেই হামলাই আমেরিকার মাটিতে হওয়া সবচেয়ে মারাত্মক হামলা।মানব সম্পদের পাশাপাশি , আর্থিক ও আর্থসামাজিক ভাবেই যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমেরিকা। এই হামলার প্রভাব পড়ে আমেরিকার অর্থনীতি এবং বিশ্ববাজারেও। 

এর পর ২০০৬ সালে আবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় নিহতদের স্মরণে তৈরী হয় স্মৃতিসৌধ। 

৯/১১ এই নারকীয় হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছিল আল-কায়দা। মনে করা হয়, এই হামলার নেপথ্যে মূল মাথা ছিল আল-কায়দা প্রধান ওসামা-বিন-লাদেনের। তবে অপর এক আল-কায়দা নেতা খালিদ শেখ মহম্মদকে ‘৯/১১ হামলার প্রধান স্থপতি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল আমেরিকা।খালিদকে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর থেকে তিনি আমেরিকার গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি।লাদেন প্রাথমিক ভাবে হামলার দায় অস্বীকার করলেও আমেরিকা কখনওই সরকারি ভাবে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দায় লাদেনের উপর চাপায়নি।তবে তানজানিয়ার দার এস সালাম এবং কেনিয়ার নাইরোবিতে থাকা আমেরিকার দূতাবাসে হামলা চালানোর জন্য এফবিআই-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিলেন লাদেন।এর পর থেকে আমেরিকার গোয়েন্দারা ১০ বছর ধরে লাগাতার খোঁজ চালাতে থাকে লাদেনের। ২০১১ সালের ১মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর গুলিতে লাদেনকে খতম করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। 


এই ঘটনা মানব সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেললেও একে অপরকে সমর্থন করার জন্য একত্রিত সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বীরত্ব এবং নিঃস্বার্থ ও একাত্ব হয়ে মানব  সমাজ কে রক্ষা করার জন্য যে প্রচেষ্টা দেখা যায় তা সত্যিই প্রসংশনীয়। ৯/১১ হামলা বিশ্বমঞ্চে গভীর প্রভাব ফেলেছিল,আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ, সন্ত্রাস দমন নীতি, গোয়েন্দা-আদান-প্রদান এবং কূটনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তবে এর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং শান্তি প্রচারের ক্ষেত্রেও সমগ্র বিশ্ববাসী একত্রে কাজ করেছে যা অবশ্যিই দৃষ্টান্তসূচক। 

প্রতি বছরই এই দিনটি ঘুরে ঘুরে আসে, তবে ধ্বংসের পর যেমন আবার নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। সেই দিনের ক্ষত সারিয়ে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ মানব সমাজ তৈরী করতে সক্ষম হয়ে আজকের প্রজন্ম। তবে এই ঐক্য এবং স্মরণ এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেদের জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গে একে সম্পৃক্ত করে তুলে নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সুদৃঢ় করে তুলতে হবে যা সমগ্র মানবজাতিকে সংজ্ঞায়িত করে সহনশীলতা, সহানুভূতি এবং ভাগ করা মূল্যবোধের গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে।

You might also like!