Editorial

6 months ago

Mahalaya 2023 : ডিজিটাল ইন্ডিয়ার জেরে কী কৌলিন্য হারাচ্ছে মহালয়ার ভোর ?

Mahalaya 2023 (File Picture)
Mahalaya 2023 (File Picture)

 

 দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রকৃতি জানান দিচ্ছে উমা এসার সময় হয়েছে, ভোরের বাতাসের শিরশিরানি, বাতাসে শিউলির ঘ্রান , আর কুয়াশা মোড়া দুরের মাঠ জানান দিচ্ছে, শরৎ এসেছে। বাঙালির প্রানের ঠাকুর রবি ঠাকুর ও শরতের সেই বর্ণানায় লিখলেন- 

"এসেছে শরৎ হিমের পরশ

 লেগেছে পাতার 'পরে।

সকাল বেলায় ঘাসের আগায় 

শিশিরের রেখা ধরে।" 

শরৎ এলেই মন উচাটন হয় , ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার সময় হয়েছে যে। মন ব্যকুল হয় তার দর্শনের জন্য, একটা বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরছে, তার বিহনে এই জগৎ সংসার যেন কালো হয়েছিল , বছর ঘুরে এবার সময় হয়েছে তার নিজ গৃহে ফেরার তা নিয়ে জল্পনা , কল্পনা, তোড়জোড়ের শেষ নেই। 


আমাদের শৈশব ! শুধু শৈশব কেন কৈশোর যৌবনে ও মায়ের আগমন সূচিত হত, মহালয়ার পূর্ণ্যলগ্নে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই কালজয়ী শ্লোক পাঠ “আশ্বিণের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা/ আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি…।”-র শোনার মধ্য দিয়ে। আজ ও আপামর বাঙালির মহালয়ার ভোর হয় এই শ্লোক শ্রবনের মধ্য দিয়ে। তবে কালের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে গিয়েছই সেই শ্লোক শোনার মাধ্যম। শহর থেকে গ্রাম মহালয়ার ভোরে এর সেই পুরাতন রেডিয়োতে মহালয়া শোনে না। পুরাতন সেই রেডিয়োকে রিপ্লেস করেছে হাতের মুঠোফোন। এখন মোবাইলের রেডিও অথবা ইউটিউবেই এ প্রজন্ম মহালয়া শোনে। 


একটা সময় মহালয়ার সাতদিন আগে থেকে রেডিও-টিভি মেরামত করার দোকানগুলিতে রীতিমতো লাইন পড়ত বাড়ি পুরানো রেডিয়োর সার্ভিসিং -র জন্য। সে সময় ইউটিঊব বা স্মার্ট ফোন তো ছিল যে চাইলেই মহিষাসুরমর্দিনী শোনা যাবে! সম্বল সেই ব্যাটারির রেডিয়ো , মহালয়া শোনায় যাতে খেদ না পড়ে সে কারনে নির্দিষ্ট দিনের আগে সার্ভিসিং করে নেওয়াটা জরুরি ছিল। সেই সময় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তেন বাড়ির বয়স্করা। কিন্তু এখন সেই দিন গিয়েছে। ইউটিউবের দৌলতে চাইলেই আপনি যখন খুশি শুনতে পারবেন  চন্ডীপাঠ থেকে দেবীর শ্লোক সব কিছুই। 


নতুন প্রজন্ম মাধ্যম বদলালেও পুরাতন সেই পুরোনোকেই আঁকড়ে বাঁচতে চায়। এখনো খুঁজলে কিন্তু পুরোনো পন্থী মানুষদের বৈঠক খানায় মিলতে পারে তিন ব্যাটারির রেডিয়ো। 

"যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নম:….।” এ কেবলই নিছক চন্ডী শ্লোক নয় এ হল বাঙালির আবেগ। মহালয়ার ভোরে আজও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এই শ্লোক শুনলে গাঁয়ে কাঁটা দেয়। প্রাক্তন সামলায় পুরাতন আর নবীন সামলায় সময়ের সেই নিশান কে। বাঙালি যতই আধুনিক হোক না কেন তার অন্তরআত্মাটা তো সেই পুরাতনের গায়ে নতুন মাটির প্রলেপে দেওয়ার মতই নতুন। তাই আধুলিকতাকে পাথেয় করেই নব প্রজন্ম পুরাতনের নিশান উড়িয়ে আজ ও মহালয়ার ঠিক আগের রাতে প্রথা মত অ্যালার্ম দিয়ে ইউটিউবে হাতড়ে খুঁজে বের করে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার শ্লোকের লিরিক। রেডিওর দিন গিয়েছে ঠিকই কিন্তু আবেগ টা তেমনই রয়ে গিয়েছে। 


 দেড় দশক আগে বাড়ির নিকোনো উঠান অথবা দালানে রাতের বিছানার সেই কাঁথা মুড়ি দিয়ে নবীন, প্রবীন, পর্দা নসিন ভেদাভেদ ভুলে একসাথে মহালয়া শোনার চল হয়ত আর নেই, তবে আজ ও মহালয়ার সকালে ঘুম ভাঙে মুঠোফোনের আলার্মে ,এখন হয়তো আর নিকোনো উঠান বা দালানে বসে শ্লোক শোনা আর হয় না তবে  ফ্যাটের সিটিং এরিয়া অথবা ব্যালকনির বাগানে বসে কফি মগে চুমুক দিতে দিতে আজ ও নতুন প্রজন্ম মহালয়া শোনে। স্মার্ট ফোনের জামানায় মহালয়ার আগে বাড়ির পুরোনো রেডিয়োতে জমে থাকা ধুলোর আস্তরন সরাতে তেমন করে আর কেউ হয়ত উদ্যোগ নেয় না।অযত্নে অবহেলায় অ্যান্টিক আইটেম হিসাবে হয়ত সে আজও বিরাজ করে হাতে গোনা বাড়ির অন্দরে, তবে মহালয়া শোনার আগ্রহে খেদ পড়েনি এতটুকু ও। ডিজিটালাইজেসন হয়ত রেডিয়োতে মহালয়া শোনার সেই আমেজ কে অনেকাংশেই খর্ব করেছে, তবে বাঙালি মহালয়ার কৌলিন্য কে আজ ও ভোলেনি।  

You might also like!