দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: আইপিএল জয়ের আনন্দে রঙিন হয়ে উঠেছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু সেই উদ্যাপন মুহূর্তেই রূপ নেয় এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১১ জন আরসিবি সমর্থক। আর এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি আরসিবি-র উপর চাপাল কর্নাটক সরকার। শুধু তাই নয়, গোটা ঘটনায় পরোক্ষভাবে নাম জড়িয়ে গেল ক্রিকেট দুনিয়ার পোস্টার বয়, বিরাট কোহলিরও। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিড় টানার যে প্রচার চালানো হয়েছিল, তাতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তিনিই।
সরকারি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বেঙ্গালুরুর বিখ্যাত চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিজয় উৎসবের পরিকল্পনা করা হয় আরসিবি-র তরফে। কিন্তু সেই পরিকল্পনার পিছনে ছিল মারাত্মক প্রশাসনিক শিথিলতা ও অনুমতির অভাব। পুলিশের সঙ্গে কোনও প্রাথমিক আলোচনা না করেই ফ্র্যাঞ্চাইজির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলি থেকে একের পর এক পোস্ট করে উন্মাদনায় উসকানি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রচারে বিরাট কোহলির ভিডিও ছিল অন্যতম আকর্ষণ। তাতে তাঁকে সমর্থকদের আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায়, যা বিপুল সাড়া ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, আরসিবি-র ওইসব পোস্ট মিলিয়ে প্রায় ৪৪ লক্ষ ভিউ হয়! জনপ্রিয়তার জোরে স্টেডিয়ামে এবং বাইরে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন।
সরকারি রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়, অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশের আশঙ্কা ছিল বহু আগে থেকেই। পুলিশ জানায়, যদি ৯ জুন, আইপিএল জয়ের পরদিনই অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে আবেগে ভেসে বহু মানুষ ভিড় জমাবেন। সেই আশঙ্কা সত্ত্বেও আরসিবি কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবে পুলিশ চাপে পড়ে চিন্নাস্বামীর অনুষ্ঠানে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। তবে একটি রোড শো বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, আরসিবি সেই সিদ্ধান্ত সমর্থকদের সামনে প্রকাশ করেনি। উলটে অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানানো হয় বিজয় শোভাযাত্রা হবে। সেই ঘোষণায় আবার টিকিট বিনামূল্যে বলেই উল্লেখ করা হয়, যদিও আসন সংখ্যা ছিল সীমিত।
কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকে এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় পুরোপুরি চাপানো হয়েছে আরসিবি-র কাঁধে। সরকারি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়াই আয়োজিত কার্যত এক অনিয়ন্ত্রিত উন্মাদনা এই বিপর্যয়ের কারণ। জনপ্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির উপস্থিতি ও তাঁর প্রচারও যে ভিড় বাড়ানোর পেছনে দায়ী, তাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। বিরাট কোহলি ও আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, একটি আনন্দঘন মুহূর্ত এত বড় শোকবার্তা বয়ে আনবে, তা কেউ কল্পনাও করেননি। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনা ও প্রচারের দায় এড়াতে পারে না ফ্র্যাঞ্চাইজি। সব মিলিয়ে, বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ভিড় যে আনন্দের উৎসব হতে পারত, তা শেষমেশ রূপ নেয় এক ভয়ংকর ট্র্যাজেডিতে। আইপিএল জয়ের খুশি থাকলেও, সেই খুশির সঙ্গে জুড়ে গেল এক গভীর শোকের ছায়া।