দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ২১ জুলাই বিজেপির ডাকা উত্তরকন্যা অভিযানকে কার্যত নস্যাৎ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর একান্ত আলোচনায় তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, “ওটা কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। ওদের নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।” রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বক্ত্যবের মাধ্যমে তৃনমূল সুপ্রিমো বিজেপির কর্মসূচিকে গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূল শহিদ দিবস ঘিরে নিজের ফোকাস ও প্রস্তুতির বার্তা দিলেন তা অবশ্যই স্পষ্টত।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। প্রতিবছর এই দিন ধর্মতলায় জনসমুদ্র দেখা যায়। তৃণমূল দাবি করে, প্রতি বছর নতুন রেকর্ড হয় জমায়েতে। এ বছরও সেই কর্মসূচিকে ঘিরে চলছে জোরদার প্রস্তুতি। অন্যদিকে, কসবা ল কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণ-হত্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির তরফে ২১ জুলাই “উত্তরকন্যা অভিযান”-এর ডাক দেন, যেটি আয়জিত হবে শিলিগুড়িতে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন ‘উত্তরকন্যা’-র সামনে। এমন কর্মসূচি একদিনে হওয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তৃণমূল পাল্টা কিছু পদক্ষেপ করতে পারে বা বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করতে পারে। তবে তা না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত বিজেপির কর্মসূচিকে পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেলেন।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। সূত্রের খবর, বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওটা কোনও গুরুত্ব দেওয়ার মতো বিষয় নয়।” পাশাপাশি, ২১ জুলাই শহীদ দিবসের সমাবেশে অংশ নিতে কলকাতায় আসা তৃণমূল কর্মীদের যাতায়াত, আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য—বিজেপির কর্মসূচির দিকে নজর না দিয়ে, তৃণমূলের শহীদ দিবস সফল করাই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার। নিরাপত্তা ও জনপরিষেবার দিকগুলো যেন খুঁটিনাটি ভাবে দেখা হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি সব দপ্তরকে সতর্ক করেছেন। সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। শহিদ দিবসের ভিড় সামাল দিতে বিশেষ ট্র্যাফিক প্ল্যান ও টহলদারি বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও এদিন ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষদের হেনস্থার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে ওই বৈঠকে এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই অন্যায় বরদাস্ত করা যায় না।” মন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা—“এবার রাস্তায় নামতে হবে। এলাকায় এলাকায় গড়ে তুলতে হবে প্রতিবাদ।”
একদিকে শহিদ দিবসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, অন্যদিকে বিজেপির প্রতিবাদ কর্মসূচি— এই দুইয়ের সংঘাতে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে, তৃণমূল ‘প্রতিরোধের বদলে উপেক্ষাকেই’ বেছে নিচ্ছে। এখন দেখার, ২১ জুলাই কীভাবে রাজনৈতিক আবহ গতি পরিবর্তন করে।