
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, কার্তিক মাস এলেই আগমন ঘটে দেব সেনাপতি কার্তিক ঠাকুরের পুজোর। তিনি মহাদেব ও দেবী দুর্গার জ্যেষ্ঠ পুত্র, এবং যুদ্ধের দেবতা হিসেবে পূজিত। পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক পুজো অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও, এই পুজোর ঠিক আগের রাতে বাংলার ঘরে ঘরে এক বিশেষ ও কৌতূহলোদ্দীপক রীতি পালিত হয়: সদ্য বিবাহিত দম্পতিদের বাড়িতে গোপনে কার্তিক ঠাকুর ‘ফেলে’ আসা।
কার্তিক পুজোর ঠিক আগের রাতে, পাড়ার ক্লাব, বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয়-স্বজনরা একত্রিত হয়ে গোপনে ‘খোকা কার্তিক’ নামে পরিচিত একটি ছোট প্রতিমা সদ্য বিবাহিত অথবা নিঃসন্তান দম্পতির বাড়িতে রেখে আসেন। এই কাজটি অত্যন্ত মজার ছলে এবং লুকিয়ে করা হয়, যা পরের দিন সকালে দম্পতির জন্য আনন্দের বিস্ময় নিয়ে আসে। এই অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া প্রতিমাটির জন্য দম্পতিকে পরদিন একটি বিশেষ পুজো করার প্রয়োজন হয়।
এই রীতিটি শুধুমাত্র একটি মজা নয়; এটি গ্রামীণ বাংলার লোকবিশ্বাস এবং একটি বিশেষ রীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, বিশেষত সেই সকল হিন্দু পরিবারের মধ্যে যারা বংশধর কামনা করেন।
ভগবান কার্তিক, যিনি তার অসাধারণ সৌন্দর্য, ক্ষমতা এবং যৌবনের জন্য পূজিত, তাঁকে পুত্র সন্তানের কামনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কার্তিক ঠাকুর ‘ফেলার’ মূল বিশ্বাসটি হলো, এর মাধ্যমে দম্পতিকে দেবতার পূজা করতে উৎসাহিত করা হয়, যার ফলে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পুত্র সন্তান লাভের আশীর্বাদ করবেন।
এই প্রথাটি ধর্মীয় ভক্তি এবং সামাজিক অংশগ্রহণের এক মনোমুগ্ধকর মিশ্রণ, যা বাঙালি সমাজে নতুন প্রজন্মের দম্পতিদের জন্য উর্বরতা এবং সৌভাগ্যের কামনাকে তুলে ধরে। দিনটি শেষ হয় মহা কার্তিক পুজোর মাধ্যমে, যেখানে 'খোকা কার্তিক' দম্পতির বিশেষ প্রার্থনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
