কৃষি দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা এবং দেশের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই প্রাচীনতম জীবিকা। ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষির তাৎপর্য অন্বেষণ করে, ভারতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান,প্রতিবন্ধকতা এবং এর ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করতে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে কৃষি অনুশীলনকে আরো বেশী করে উৎসাহিত করা উচিত।
জিডিপি এবং কর্মসংস্থানে অবদান:
কৃষি ভারতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ মনে করা হয়, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে চলেছে। যদিও বছরের পর বছর ধরে জিডিপিতে কৃষির অংশ হ্রাস পেয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান এবং গ্রামীণ পরিবারের জন্য আয় সৃষ্টিতে কৃষির ভূমিকাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
খাদ্য নিরাপত্তা:
ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে চলেছে কৃষিকাজ। খাদ্যশস্য, ফল, শাকসবজি এবং ডালের মতো বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে এর অবদান অনস্বীকার্য্য। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষ বন্টন ব্যবস্থার প্রচার এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা করা অপরিহার্য।
গ্রামীণ উন্নয়ন:
কৃষি গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য একটি বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রেখেছে এবং গ্রামীণ এলাকায় জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। শুধু তাই নয় এটি কর্মসংস্থানের সুযোগ ও করেছে।এর পাশাপাশি গ্রামীণ পরিকাঠামোর ও উন্নয়ন করেছে এবং কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চয়স্থান, পরিবহন এবং বিপণনের মতো অর্থনৈতিক কার্যক্রমকেও পরিপুষ্ট করেছে।সেক্ষেত্রে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করা এবং ক্রেডিট, প্রযুক্তি এবং বাজারের সংযোগে অ্যাক্সেস বাড়ানো ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেওইয়া উচিত।
রপ্তানির সম্ভাবনা:
ভারতীয় কৃষি ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে কৃষিজাত দ্রব্যের রপ্তানিকে আরো অনেক বেশী পরিপুষ্ট করে তুলতে পারলে অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনাকে আরো কয়েকগুন বাড়ানো সম্ভব হবে , সর্ব প্রথম বিভিন্ন কৃষিপণ্য গুলির বৈশ্বিক চাহিদা খুঁজে বার করতে হবে, দেশের উৎপাদিত পণ্যে গুলির মধ্যে চাল, গম, মশলা, ফল এবং সবজি বিখ্যাত।আই পন্য গুলির মান উন্নীত করে, পরিকাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে এবং আর্থিক আনুকূল্য প্রদানের মাধ্যমে ভারত তার কৃষি রপ্তানিকে শক্তিশালী করতে পারে। এর ফলে ভারতীয় কৃষিপন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে গতি প্রদান করতে সক্ষম হবে
জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়িত্ব:
তবে কৃষিকাজে জলবায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য কৃষিকাজে ও না না প্রকার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা কৃষকদের এবং সামগ্রিকভাবে কৃষিকাজের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরণ, জলের ঘাটতি, মাটির ক্ষয়, এবং কীটপতঙ্গের উপদ্রব কৃষকদের নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন করে তোলে। তবে কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষ সেচ পদ্ধতি, কৃষি সংরক্ষণ, শস্য বৈচিত্র্যকরণ এবং কৃষিকাজের অধিক থেকে অধিকতর প্রসার ও উন্নত কৃষি অনুশীলন এবং উন্নত প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, গ্রামীণ উন্নয়নকে চালিত করছে এবং রপ্তানির মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতির বিকাশে যথেষ্ট অবদান রাখছে। ফলত , ভারতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে দৃঢ়তা প্রদানে কৃষির তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
কৃষিকাজের উন্নয়ন ও প্রসারের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের বিনিয়োগ এবং উদ্যোগগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যা কৃষকদের ক্ষমতায়নকে আরো শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাকেও বাড়াবে এবং অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে। সাথে বাজারের যোগসূত্রকেও জোরদার করতে অর্থ ও প্রযুক্তিকে আরো বেশী করে এই জীবিকায় প্রয়োগ করতে হবে।
একটি শক্তিশালী এবং সংগঠিত অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরী করতে কৃষিকাজকে আরো বেশী করে উৎসাহিত করতে হবে , এর মাধ্যমে ভারত কেবল অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে তাই নয় বরং তার নাগরিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতও সুরক্ষিত করতে পারে। কৃষিকাজের প্রসারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রদান করা সম্ভব হবে।