দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় রেল স্টেশনের তালিকা খুঁজতে বসলেই পেয়ে যাবেন সেই নাম। তবে শুধু এমন নামের স্টেশন বলে নয়, বাদাম পাহাড়ের পরিচিতি তার সৌন্দর্যের জন্য।
সেখানে পৌঁছতে টাটনগর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের সুবিধা পাওয়া যায়। বাদাম পাহাড়ে নেমে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ফেলা যায় আশপাশ। ঝাড়খণ্ড পার করে শুরু হচ্ছে ওড়িশা। এই রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলায় তার অবস্থান। ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ বাদাম পাহাড় এখন কিছুটা শহুরে। পাকা সড়ক, দোকানপাট, হোটেল হয়েছে সেখানে। তবে মুছে যায়নি প্রকৃতির অকৃত্রিমতা। নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পাহাড়ের দেখা মিলবে সেখানে। বর্ষার জল পেয়ে গাছগাছালি আরও সবুজ। সেই শ্যামলিমাই যেন প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তুলেছে। তাই বাদাম পাহাড় ঘুরে নেওয়ার এই উপযুক্ত সময়।
ওড়িশার এই অঞ্চল যদিও মূলত খনি এলাকার জন্য পরিচিত, তবুও 'বাদাম পাহাড়' নামটাই যেন সবার নজর কাড়ে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নির্জনতা তাকে পরিচিতি দিয়েছে। এখনও সেখানে সে ভাবে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না বটে, তবে ‘অফবিট’ ভ্রমণ নিয়ে যাঁদের উৎসাহ, তাঁদের কারও কারও পা পড়েছে সেখানে।
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলা মূলত লৌহ আকরিকের খনির জন্য পরিচিত।তবে পর্যটনস্থল হিসাবেও এই জেলা কম সমৃদ্ধ নয়। এখানেই সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান। জলাধার, ঝর্না এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এই জেলার পদে পদে।
তবে যদি বাদাম পাহাড়ই ভ্রমণের মূল লক্ষ্য হয়, তা হলে ঘুরতে পারেন অন্য ভাবেও। বনবাংলোয় রাত্রিবাস করতে পারেন। আর পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ। এই স্থান এক্কেবার নিজের মতো প্রকৃতি উপভোগের জন্য।
বাদাম পাহাড়ে থেকে মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড় ঘেরা সুলাইপাত বা সুলেইপাত জলাধার। জায়গাটি সিমলিপাল অরণ্য থেকে মোটামুটি ২০ কিলোমিটার দূরে। বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে তার অবস্থান। পায়ে হেঁটে পুরোটা ঘোরা কষ্টকর। বাইক বা গাড়ি থাকলে জলাধারটি এক চক্কর দিয়ে আসতে পারেন।
সুলাইপাত থেকে ফের পাকা সড়ক ধরে এগোনোর পালা। পরের গন্তব্য বাঁকবল জলাধার। পথেই পড়বে ময়ূরভঞ্জের একাধিক গ্রাম। শীতে যা রুক্ষ, বর্ষায় তা শ্যামল। লোহার খনির জন্য পথের দু’পাশের মাটি লালচে। পাহাড়কে সঙ্গী করে রায়রংপুরের রাস্তা ধরে গেলে দূরত্ব কম বেশি ৩০ কিলোমিটার। তবে স্থানীয়দের যাতায়াতের অরণ্যপথ ধরলে দূরত্ব কমে যাবে বেশ কিছুটা।
তবে কতটা ঘুরবেন, কী ভাবে ঘুরবেন, সবটাই নির্ভর করে হাতে ক’টা দিন ছুটি, তার উপরে। দিন দুয়েকের জন্য গেলে বাদাম পাহাড় ঘুরে এই দুই জলাধার দেখে নিতে পারেন। তবে হাতে বাড়তি সময় থাকলে সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, বাংরিপোসির জঙ্গলও ঘোরা যায়। বর্ষায় অবশ্য গহীন অরণ্য এবং সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি মেলে না। তবে অরণ্য সংলগ্ন কয়কেটি স্থান ঘোরা যায়। যেমন এই সময়ও ঘোরা যায় লুলুং। স্থানটি সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পের লাগোয়া জায়গায় অবস্থিত।
কী ভাবে যাবেন?
বাদাম পাহাড় যাওয়া যায় ট্রেনে। হাওড়া থেকে প্রথমে টাটানগর স্টেশন। হাওড়া থেকে রাতের সমলেশ্বরী এক্সপ্রেস ধরলে ভোররাতে টাটানগর পৌঁছে যাবেন। টাটানগর-বাদামপাহাড় মেমু আছে। সকাল ৬টায় একটি ট্রেন আছে যেটি বাদাম পাহাড় পৌঁছয় ৯টা ৪৫ মিনিটে। বেলা ১০টাতেও ট্রেন আছে। সড়কপথে দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটারের মতো।
থাকবেন কোথায়?
বাদাম পাহাড়ে ওড়িশার বন দফতরের বাংলো আছে। একটি হোটেলও হয়েছে। তার বাইরে বিশেষ থাকার ব্যবস্থা নেই। চাইলে টাটানগরে থেকে বাদাম পাহাড় ঘুরেও ফিরে আসা যায়।