দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : জুলাইয়ের শুরুতেই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর চাতুর্য পূর্ণ প্রচার শুরু। লোভনীয় অফার, বিশাল ছাড়—সব কিছু সাজিয়ে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। মোবাইল স্ক্রিনে চলতে থাকে নিরবচ্ছিন্ন স্ক্রলিং, একের পর এক পণ্য ঢুকে পড়ে কার্টে। আর বুঝে ওঠার আগেই উড়ে যায় মোটা অঙ্কের টাকা! কেনার যেন কোনও শেষ নেই!
দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে অনলাইন কেনাকাটার অভ্যাস।চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিষয়টিকে বলা হয় ‘কম্পালসিভ বাইং ডিজ়অর্ডার’ (সিবিডি)। অর্থাৎ প্রয়োজন নেই, অথচ কেনার প্রবণতা। বিশ্বব্যাপী একাধিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অনলাইন কেনাকাটার দৌলতে বহু মানুষের সঞ্চয় তলানিতে এসে ঠেকেছে।
ছাড় আর দ্রুত ডেলিভারির টানে ক্রেডিট কার্ডের বিল বাড়ছে হু হু করে—তবু থামতে চান না কেউ।অনলাইন পেমেন্ট সহজ হওয়ায় এখন ছোট শহরের মানুষও অনলাইনে জিনিস কিনছেন।ভারতে গত দু’বছরে বড় শহরের তুলনায় ছোট শহরে অনলাইনে জিনিস কেনার হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে। মনোবিদদের দাবি, অনলাইনে কেনাকা্টার আসক্তি কখন তৈরি হয়, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। বরং মাসের শেষে খরচের হিসেব নিয়ে বসলে, তখন তাঁরা অনুশোচনায় দগ্ধ হন।অযথা কেনাকাটির বিরুদ্ধে গত এক বছর ধরে বিদেশে বহু মানুষ ‘নো বাই’ নীতি (অপ্রয়োজনীয় জিনিস না কেনা) অনুসরণ করছেন। কিন্তু তা এখনও ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে।
অনলাইন কেনাকাটায় লাগাম টানতে কিছু সহজ পরামর্শ মেনে চলা যেতে পারে।
১) দিনের মধ্যে একটা বড় সময়ে কাটে ফোনে। কিন্তু ক্লান্তি বা অবসাদের শিকার হলে অনলাইন কেনাকাটির অ্যাপ না দেখাই ভাল। পরিবর্তে বাড়ির বাইরে হেঁটে আসা যায়। বই পড়া, গান শোনা বা শরীরচর্চার মতো স্বভাবগুলি এ ক্ষেত্রে খুব সাহায্য করে।
২) মাথায় রাখতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটার অ্যাপগুলি ব্যবহার করা যাবে না। একই সঙ্গে অ্যাপগুলির নোটিফিকেশন ফোনে বন্ধ রাখা উচিত। তার ফলে তাদের ছাড় বা ‘নিউ লঞ্চ’-এর প্রলোভন থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকা যায়।
৩) অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে সিওডি বা ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ করা উচিত। অন্য দিকে, ক্রেডিট কার্ডের বদলে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত। তার ফলে খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
৪) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া,শখ-শৌখিনতা সম্পর্কিত জিনপত্র কেনাকাটির ক্ষেত্রে আগে কার্টে যোগ করে রাখা উচিত। তার পর এক-দু’দিন সময় নেওয়া যায়। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে, সত্যিই সেই জিনিসটি আপনার প্রয়োজন কি না। তা হলে কিনে নিন। অন্যথায় কার্ট থেকে মুছে দিন।
৫) ল্যাপটপের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন-ছাড়া ওয়েব ব্রাউজ়ার ব্যবহার করলে, কেনাকাটার দিকে মন যাবে না। একই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে প্রভাবীদের অনুসরণ বন্ধ করা উচিত। তাঁদের প্রচারের ফলেও অনেকেই নানা জিনিস অলাইনে কিনে থাকেন।
৬) অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস ফোনে খরচের হিসেব রাখার জন্য নানা ধরনের অ্যাপ রয়েছে। সেগুলি ব্যবহারের মাধ্যমেও অনলাইন কেনাকাটার জন্য বাজেট স্থির করা যায়। ফলে খরচও কমে।
৭) যদি কেনাকাটা না নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা হলে অন্যকে বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে পুরনো জিনিসপত্র দিয়েও দেওয়া যায়। তার ফলে বাড়িতে অহেতুক জিনিসপত্রের ভিড় বাড়বে না। নতুন জিনিস কেনার পর বাড়িতে তা পেয়ে যদি পছন্দ না হয়, তা হলে ফেরত দিয়ে দেওয়া উচিত।
৮) আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব অনেক সময়েই তাঁদের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। এমনকি, ফোনে জিনিসগুলির লিঙ্কও পাঠিয়ে দেন। এ রকম ক্ষেত্রে খোলামনে তাদের জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, আপনার উদ্দেশ্য কী। তাঁরা বুঝতে পারলে, পরোক্ষে আপনারও লাভ হবে।
উপরের পরামর্শ মেনেও যদি শপিংয়ের নেশা না কমে, তাহলে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।