দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে শহরবাসী। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই কলকাতার নানা রাস্তায় জমছে জল। সেই জমা জল পেরিয়ে লোকজনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। আর এখান থেকেই ছড়াচ্ছে নানা অসুখ।
কলকাতায় গত কিছু দিনে কলেরায় আক্রান্ত রোগী মিলেছে। ডায়েরিয়ার প্রকোপও বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে জলবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে। ডায়েরিয়া, কলেরা, আমাশয়—এই সব রোগ ছড়ায় দূষিত জল বা খাবারের মাধ্যমে। পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াও এই সময়েই বেশি হয়। তাই এই সময়ে একটু বেশিই সাবধানে থাকতে হয়।
বর্ষাকালে কলেরার প্রকোপ সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়, যদিও বছরের অন্য সময়গুলিতে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। প্রতি বছরই শহর ও জেলায় প্রচুর কলেরা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়।এর কারণ হল দূষিত জল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার, এমনটাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার।তাঁর কথায়, “ভাইরাল জ্বর ও পেটের রোগ এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর কারণ হল ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া মলের মধ্যে থাকে। কোনও কারণে মল জলের সঙ্গে মিশে গেলে সংক্রমণ হয়। তা ছাড়া, টাইফয়েড, ক্লসটিডিয়াম, সিরেলা, সালমোনেল্লা থেকেও সংক্রমণ হয়। বাসি খাবার খাওয়া, দূষিত জল কোনও ভাবে পেটে গেলেই মুশকিল। তা ছাড়া জল কোথায় রাখছেন, কোন পাত্র থেকে জল খাচ্ছেন এই সবও কিন্তু পেটের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
বৃষ্টির জমা জল, পুকুর-নালার দূষিত জল থেকে আন্ত্রিক, ডায়েরিয়ার মতো রোগও ছড়াচ্ছে। পেটখারাপ, ডিহাইড্রেশন ,বমির সমস্যায় অনেকে ভুগছেন। অনেক সময়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে নিকাশি নালা দিয়ে জল বয়ে চলেছে। সেই নোংরা, ঘোলাটে জলেই বাড়ির মেয়েরা গৃহস্থালির কাজ সারছেন।বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা আবার সেই জলেই শৌচকর্ম সারছে। এই দৃশ্য অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় । শহরাঞ্চলেও নিকাশি নালার জলে বাসনপত্র ধোয়ার কাজ সারেন অনেকেই। নিকাশি নালার কথা বাদ দিলে রয়েছে পুকুরের নোংরা জল। তার থেকেও জীবাণুঘটিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
ভরা বর্ষায় সতর্ক থাকার সহজ কিছু উপায়:
.বর্ষার সময় কল বা ট্যাপের জল সরাসরি পান করা থেকে বিরত থাকুন। পানীয় জল ফুটিয়ে তবেই পান করা ভাল।
.চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যদি ওয়াটার ফিল্টার বা পিউরিফায়ার ব্যবহার করেন, তবে সেগুলি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পিউরিফায়ারও যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে, তা হলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
যে বোতল থেকে জল পান করছেন বা যে পাত্রে জল রাখছেন, সেটি পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। অনেকেই বাড়িতে কুঁজো বা মাটির পাত্রে জল রাখেন। সেখান থেকে গ্লাস ডুবিয়ে জল খান। এর থেকেও কিন্তু ব্যাক্টেরিয়ার আদানপ্রদান হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
.বাইরে খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে বরফ মেশানো থাকলে তা এড়িয়ে চলুন, কারণ, বরফ তৈরির জল দূষিত হতে পারে।
.রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা জরুরি। আনাজপাতি, শাকপাতা ভাল করে নুন জলে ধুয়ে তবেই রান্না করতে হবে। কাটা ফল, কাঁচা স্যালাড এই সময়ে কম খাওয়াই ভাল।
.এই সময়ে বাইরের খাবার যতটা সম্ভবঅঙ্গে এড়িয়ে যেতে হবে। ফাস্ট ফুড একেবারেই নয়। ঘরের হালকা খাবার এই সময়ে খুবই উপকারী। তেল, মশলা যুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলুন।
.রান্না করা খাবার এবং অবশিষ্ট খাবার পরিষ্কার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন যাতে মশা-মাছি বা পোকামাকড় বসতে না পারে। ফ্রিজে রাখা বাসি খাবার খাবেন না।
.পরিবারের কারও ডায়েরিয়া ও ঘন ঘন বমি হতে থাকলে, দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণ পেটের সমস্যা হলে নুন-চিনির জল খাওয়া উচিত। এ ছাড়াও পাতলা ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া যেতে পারে । আর সমস্যা যদি বেশি হয়, তা হলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।