দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃমোবাইল ফোন, আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে যাওয়া এক যন্ত্রের নাম। আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। আর আধুনিক জীবনের নানা হিসেব পালটে দেওয়া মুঠোফোন। নানা কাজে অকাজে মুঠো ফোন ব্যবহার করতে করতে কখন যেন ওই এতটুকু যন্ত্রটাই চালাতে শুরু করেছে আমাদের। বুঝতেই পারিনি। তবে মোবাইল ফোনের ওপর আমরা সবাই-ই কম বেশি নির্ভরশীল, কিন্তু কারোর কারোর ক্ষেত্রে সেটা আসক্তির পর্যায়ে।
সম্প্রতি অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা বলছে, তরুণ প্রজন্মের যারা মোবাইল ফোনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত, তাঁদেরকেই অবসাদ গ্রাস করে বেশি। ১৮ থেকে ৩০-এর মাঝে বয়স, এমন ১০০০ জনকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। প্রত্যেকে দিনের কতোটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আরও নানা প্রশ্নের সঙ্গে। তারপর তাদের ব্যক্তিত্ব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
সমীক্ষার ফলাফল বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা বাড়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই নেতিবাচক অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর একই সঙ্গে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় থাকা যত বাড়তে থাকে, মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলা কমতে থাকে, এই দুইয়ে মিলে অবসাদ-হতাশা বাড়তে থাকে।
সোস্যাল মিডিয়া বাদ দিয়ে বাঁচার কথা আমরা হয়তো ভাবতেই পারি না। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউবে চোখ না রাখলে চলেই না আমাদের। অনেকেই আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটান সোস্যাল মিডিয়ায়। যদিও তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের তুলনায় এই বছর কিছুটা কমেছে সোস্যাল মিডিয়ার আসক্তি৷ অন্তত সময়ের নিরিখে তো বটেই। গত বছর গড়ে ১৫১ মিনিট সোস্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাতেন নেটিজেনরা। এই বছর তা কমে হয়েছে ১৪৩ মিনিট।
আচ্ছা, আপনি কি জানেন বিশ্বের কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি আসক্ত সোস্যাল মিডিয়ায়? দৈনিক কত ঘণ্টা তাঁরা কাটান সমাজমাধ্যমে? ২০২৪ সালের তথ্য বলছে, দিনে সবচেয়ে বেশি সময় সমাজমাধ্যমে কাটান ব্রাজিলের অধিবাসীরা। প্রতিদিন গড়ে ৩ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট। তুলনায় অনেকটাই কম মার্কিনদের সমাজমাধ্যমের আসক্তি৷ গড়ে দৈনিক ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ ব্যবহার করেন গুগল। তারপরেই জনপ্রিয় ইউটিউব। তারপরেই ফেসবুক। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী আছেন ভারতে। ৩১৪.৬ মিলিয়ন! অনেক পিছনে দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭৫ মিলিয়ন।
গত দেড় দশকে আমাদের জীবনের অনেকখানি দখল করে নিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া। তার প্রভাব কি এই প্রজন্মের ওপর সবটাই নেতিবাচক? গবেষকদের একাংশ কিন্তু উল্টোটাও বলছেন। তাঁদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয়েছে জেন ওয়াই।
বার্লিনের বিশিষ্ট সাইকোথেরাপিস্ট উমুট ওজডেমিরের মতে, সোস্যাল মিডিয়ার প্রাদুর্ভাব যুবসমাজের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা অনেকখানি বাড়িয়ে তুলেছে।যে বিষয়গুলি নিয়ে আগে একেবারেই কথা হত না, বরং কথা বলতে লজ্জাই পেতেন অনেকে, সেগুলি নিয়ে এখন নিঃসংকোচে আলোচনা হয়, অনেকে নিজের রোগ চিনতেও পারেন।
যেমন ধরা যাক 'অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভি ডিসওর্ডার' বা এডিএইচএ নিয়ে সচেতনতাও বেড়েছে অনেক। এডিএইচডি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ধরা পড়ছে, তার কারণ, রোগটির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি নয়, বরং রোগীদের সচেতনতা অনেকটা বেড়ে যাওয়া। এই সচেতনতা বৃদ্ধির পিছনে সোস্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তবে এতে সমস্যাও আছে৷ অনেকেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা টিকটক থেকে চলজলদি সমাধান খুঁজে নিচ্ছেন। এর ফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খারাপ হয়। কারণ এই সব সমাধানসূত্রের পিছনে না আছে পেশাদার দক্ষতা বা শিক্ষা, না আছে চিকিৎসকসুলভ ডায়গনোসিস। একটা সহজ কথা আমরা অনেকেই বুঝি না, মনের অসুখটাও শরীরের অসুখেরই মতো। সেটা সাটানো হাতুড়েদের কম্ম নয়৷ প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা।