Festival and celebrations

1 year ago

Bonedi Barir Pujo: কলকাতার ৫টি সেরা বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো!

Durga Idol (Symbolic Picture)
Durga Idol (Symbolic Picture)

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাতাসে কাশের দোলায় জানান  দিচ্ছে আগমনীবার্তা। পুজো প্রায় সমাগত। উত্তর কলকাতার জনপ্রিয় কুমোরপাড়া কুমোরটুলিও সেজে উঠছে। শিল্পীরা তাঁদের হাতের জাদুতে তুলিতে টান দিচ্ছেন, ফুটিয়ে তুলছেন মৃন্ময়ী মাতৃশক্তিকে। আবার অন্যদিকে অনেক বড় বড় পুজো কমিটিগুলি একেবারে লেগে পড়েছে নিজেদের থিমকে সেরার চমক দিতে। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যম মারফত দর্শনার্থীরা দেখে নিয়েছেন কলকাতার পুজোয় এবার কোথায় কি থিম হতে চলেছে। তবে যতই থিমের পুজো আসুক কলকাতার পুজোর ঐতিহ্যের কথা কিংবা রীতিনীতির কথা বলতে গেলে কিন্তু উঠে আসে কলকাতার বিখ্যাত কিছু বনেদি বাড়ির পুজোর কথা। যে পুজোকে কেন্দ্র করে ঘটে উৎসব ও একতার মেলবন্ধন। তবে সেই ধরণের পুজো যদি দেখতেই হয়, তাহলে জেনে নিন বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে হলে আপনাকে কোথায় কোথায় যেতে হবে। 

১) সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো


কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো একটি। ১৬১০ সালে স্ত্রী ভগবতী দেবীর ইচ্ছেয় লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার এখানে প্রথম আটচালার দুর্গা প্রতিমার পুজো শুরু করেন। এখানে প্রতিমার বৈশিষ্ট্য বলতে আপনি দেখতে পাবেন লাল রঙের বা হালকা সোনালী রঙের মাতৃ প্রতিমা, এখানে দশমহাবিদ্যা থেকে মা দুর্গার ভিন্ন রূপের পুজো করা হয়ে থাকে। এখানে মহিষাসুরের গায়ের রং সবুজ। এই পুজো বিদ্যাপতি রচিত দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনীতে থাকা নিয়ম বা রীতি মেনে সম্পন্ন হয়। 

প্রথমদিকে অবশ্য এই পুজোর স্থান ছিল বড়িশার জমিদার বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপ। কিন্তু পরবর্তীকালে যাতে সকলেই এই পুজোতে অংশগ্রহণ করতে পারে তাই মোট আটটি পুজো শুরু হয়। শুধু বরিশাতেই হয় ছটি পুজো, সেগুলি হল আটচালা বাড়ি পুজো ,বড় বাড়ি পুজো ,বেনাকি বাড়ি পুজো, মেজো বাড়ি পুজো ,কালীকিঙ্কর ভবন পুজো এবং মাঝের বাড়ি পুজো।সপ্তম পুজো টি হয় বিরাটি তে বিরতি বাড়ি পুজো এবং অষ্টম পুজোটি নিমতা তে নিমতা পাঠানপুর বাড়ি পুজো নামে প্রসিদ্ধ। এই পরিবারের দূর্গা পুজো যেরকম রীতি মেনে সম্পন্ন হয় তাতে যোগিনী এবং উপদেবতারাও মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমী তে পূজিত হন। শাক্ত -শৈব -এবং বৈষ্ণব এই তিন ধারার ই প্রভাব এই পুজোয় দেখা যায় সেই জন্য এই পুজোর মহিমা বাকি সব পুজোর থেকে আলাদা। প্রতি বছরই সমস্ত রকম নিয়মানুবর্তিতা মেনে এই পুজোটি সম্পন্ন হয়।

২) ভবানীপুর মল্লিক বাড়ির পুজো


কলকাতার বিখ্যাত বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভবানীপুরের মল্লিক বাড়ির পুজো। আগে অবশ্য এই পুজো কলকাতায় হত না। নবাব হুসেন শাহের আমলে এই পুজোর সূচনা হয়। কলকাতায় এই পুজো শুরু হয় ১৯২৫ সালে। এখানে প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল একচালা সাবেকি মাতৃপ্রতিমা। জন্মাষ্টমীর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা তৈরির কাজ। দুটি ভিন্ন স্থানে সম্পন্ন হয় এই পুজো একটি দূর্গা দালান এবং অপরটি অন্নপূর্ণা দালান। 

বৈষ্ণব মতে এই পুজোয় পশুবলির কোনো রীতি নেই। পুজোর কদিন নিরামিষ খাদ্যই আহার হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন এই পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের মহিলারাই এই পুজোয় কাজ করে থাকেন। এই পুজোয় রঞ্জিত মল্লিক ও কোয়েল মল্লিক ছাড়াও অন্যান্য সেলেব্রিটিরা আসেন। দশমীতে সিঁদুর খেলা এবং বিজয়া দশমীতে অষ্টদূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ এই পরিবারের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য দুটি রীতি।

৩) ছাতুবাবু লাটুবাবু পরিবারের পুজো


এই পুজো দেখতে হলে আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রীট। ১৭৭০ সালে নিজের বসত বাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজো করেন বিডন স্ট্রীট নিবাসী রাম দুলাল দে। পরবর্তী কালে তার দুই সন্তান আশুতোষ দে এবং প্রমথ নাথ দে-র নামানুসারে এই পুজো ছাতুবাবু ও লাটুবাবু নামে বিশেষ পরিচিত। এই পুজোয় প্রতিমাই হল মুখ্য আকর্ষণ। প্রতিমার চালচিত্রে দেবী দুর্গার দুই সখি জয়া ও বিজয়া বর্তমান। এছাড়া চালচিত্র্রে মহাদেব ,ভগবান রাম এবং হনুমান এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এছাড়া আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো দেবী সরস্বতী ও দেবী লক্ষ্মী র হাতে বীণা ও চালের পাত্র থাকে না। শুধু আশীর্বাদ করার জন্য হাত ওঠানো থাকে। এই পরিবারে দেবী মায়ের উদ্দেশ্য সবজি বলিদান করা হতো যা আজ ও পালন করা হয়ে থাকে।

৪) শোভাবাজার রাজ বাড়ির পুজো



উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোর কথা কে না জানে। গোটা দুর্গা পুজোর ইতিহাস  এই পুজো কেন্দ্র করেই। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লা র বিরুদ্ধে ব্রিটিশের জয় কে উদযাপন করতে প্রথম বার এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রথম পুজোটি রাজা নবকৃষ্ণ দেব নির্মিত বড় রাজ বাড়িতেই সম্পন্ন হয়েছিল। তবে এখন বড় রাজবাড়ী এবং ছোট রাজবাড়ী দুটি স্থানেই এই পুজো সম্পন্ন হয়। প্রতিবছর এই পরিবারের প্রায় সমস্ত সদস্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর সময় একত্রিত হন। প্রথম বার পুজোর সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে লর্ড ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংস নিমন্ত্রিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ দেব ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি আরো বহু শ্রদ্ধেয় ব্যত্তিত্বের উপস্থিতি এই পুজোর মাহাত্ম্য কে বাড়িয়ে তুলেছে।

এই রাজবাড়িতে আগে পুজোর ৫ দিন দেশের ভিন্ন নৃত্য ও সংগীত শিল্পীরা এসে তাদের শিল্পের প্রদর্শন করতেন। সারারাত নাচ ও গানে এই রাজবাড়ী মেতে উঠতো।কথিত আছে দেবী দুর্গাও এই গান শুনতে আসতেন। তবে এখন এই নাচ ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।প্রতি বছরই বহু মানুষ এই রাজবাড়িতে আসেন এবং দেবী মায়ের দর্শন করেন।

৫) হরিনাথ মুখার্জী পরিবারের পুজো


হরিনাথ মুখার্জীর নামানুসারে এই পরিবারের পুজো হরিনাথ মুখার্জী পরিবারের পুজো। এই পুজো শুরু হয় ১৭২০ সালে। শক্তিসাধনায় দীক্ষিত এই পরিবার বসতবাড়ির ঠকুরদালানে এই পুজো আয়োজন করে থাকে। ঠাকুর দালানের শোভা আজ এই পরিবারের প্রতিপত্তি ও সৌখিনতার সাক্ষ্য বহন করে। পুরো ঠাকুর দালান টি নানা রঙের ফুল এর কারুকার্য করা।এই ঠাকুর দালানের শোভা এবং পুজো দেখার জন্য প্রতিবছর বহু ভক্তের সমাগম হয়।


You might also like!