দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :বিজেপি-শাসিত রাজ্যে আক্রান্ত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষিত শ্রমশ্রী প্রকল্প কার্যকর করতে বৃহস্পতিবার থেকেই মাঠে নামছে শ্রম দফতর। মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, একটি বিশেষ পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। যদিও পোর্টাল চালু হতে এখনও কয়েকদিন দেরি রয়েছে, তবু তাঁর নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেল।
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, পোর্টাল চালু হলে অনলাইনে শ্রমিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে আপাতত যাঁরা ইতিমধ্যেই রাজ্যে ফিরে এসেছেন, তাঁদের অফলাইনের মাধ্যমে শ্রমশ্রী প্রকল্পে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ জন্য শ্রম দফতরের কর্মীরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় শিবির করবেন এবং ধাপে ধাপে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই প্রকল্পের সুবিধার আওতায় আনা হবে।
শ্রম দফতর সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে বহু পরিযায়ী শ্রমিক ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার মূলত এই জেলাগুলিতেই শ্রম দফতরের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছে গিয়ে শ্রমশ্রী প্রকল্পে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতে কোনও রকম বিলম্ব চায় না শ্রম দফতর। তাই মন্ত্রী মলয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন দফতরের আধিকারিকেরা। বিজেপিশাসিত রাজ্যে আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম দিল্লিতে সংসদের অধিবেশনে ব্যস্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। তিনি কলকাতায় ফিরলে শ্রম দফতর পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি বড় কর্মসূচি করবে। যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের শ্রমশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি তথা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা প্রচার করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধের অঙ্গ হিসাবে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলায় ফিরে এলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নতুন ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় মাসে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। বেশ কিছু দিন ধরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছিল ‘কর্মসাথী’ প্রকল্পে। তার জন্য চালু আছে একটি পোর্টাল। মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এ বার ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এই দুই পোর্টালের সেতুবন্ধন করে তথ্য মেলানো হবে। রাজ্যের ‘কর্মসাথী’ প্রকল্প অনুযায়ী, নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লক্ষ ৪০ হাজার। যদিও বিভিন্ন মহলের মতে, নাম লেখানো নেই, এমন অংশ ধরলে বাইরে কর্মরতদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ওই দিন প্রকল্প ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা ফিরবেন, তাঁরা ভ্রমণ সহায়তা-সহ এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে পাবেন। পুনর্বাসন ভাতা এটা। এর মানে এক বছর, নতুন কাজের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে নোডাল ডিপার্টমেন্ট হল শ্রম দফতর। আমাদের ‘উৎকর্ষ বাংলা’ আছে। সেখানে ‘স্কিল ট্রেনিং’ দেওয়া হয়। ফিরে আসা শ্রমিকদের কার কী দক্ষতা আছে, সেটা দেখা হবে। দক্ষতা থাকলে দরকারে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া আমরা ‘জব কার্ড’ দেব। কর্মশ্রী প্রকল্পে ৭৮ লক্ষ জব কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লোনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যসাথী কার্ড দেব। স্বাস্থ্যসাথী থাকবে। বাড়ি না থাকলে কমিউনিটি সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা হবে। স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে ছেলেমেয়েদের। কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর সুবিধাও পাবেন। বাংলায় যে ২২ লক্ষ ৪০ হাজার শ্রমিক বাইরে আছেন, তাঁরা সকলে ‘শ্রমশ্রী’-র সুবিধা পাবেন। যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেননি, তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।’’ তাঁর আরও সংযোজন ছিল, ‘‘কিছু দিনের মধ্যে যাঁরা রাজ্যে ফিরে এসেছেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করাতে পারবেন। শ্রমশ্রী পোর্টালে নাম তুললে তাঁদের একটা আই কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে রাজ্য সরকারের সুযোগ-সুবিধাগুলি পাবেন তাঁরা।’’