আমবাসা (ত্রিপুরা) : অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে শাসকদলের একাংশ লোক সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মনু শিশু উন্নয়ন প্রকল্প অধিকর্তা দফতরের বিরুদ্ধে।
মহকুমার নালকাটা দেবীপুর কলোনির পর পূর্ব মনু ভিলেজের গকুলনগর ২ নম্বর কলোনির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অভিযোগ, সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে অস্থায়ী পদগুলিতে পছন্দের লোককে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি মনু আইসিডিএস প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন ভিলেজের অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারগুলির জন্য কর্মী তথা দিদিমণি ও হেল্পার নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ ডাকা হয়।
পূর্ব মনু ভিলেজের গকুলনগর ২ নম্বর কলোনির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীর জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু অনেকের আবেদনই বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পেছনে কারণ হিসাবে সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী যে ভিলেজ অথবা ওয়ার্ডে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি রয়েছে সেই ওয়ার্ড থেকেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী অথবা হেল্পার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কয়েকজনের জন্য নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেও কতিপয়ের জন্য নির্দেশিকা কলাপাতা।
জানা গেছে, এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মরত কর্মী সুষমা দাস অবসর গ্রহণের পর গত ৩০ মে গকুলনগর কলোনি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সকল সদস্য-সদস্যাগণ রেজুলিউশন নিয়ে সুষমা দাসের জায়গায় মিঠুন দাসের স্ত্রী সঙ্গীতা দাসকে নিয়োগ করার আবেদন জানান। এরই মধ্যে সিডিপিও অফিস থেকে এই পদের আবেদন আহ্বান করলে সঙ্গীতা দাসও আবেদন করেন। কিন্তু দেখা যায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি বর্তমান অথচ নিয়োগ পেয়েছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুপ্রীতা দাস।
অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে দয়েকজন শাসক দলীয় নেতার কারসাজিতে সঙ্গীতার নাম বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, সরকারি নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সুপ্রীতাদেবীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এদিকে জায়গার মালিক সুধাংশু দাস দাবি করেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য তিনি জোত জায়গা দান করেছেন। দাবি একটাই, পরিবারের কাউকে একই কেন্দ্রে হেল্পার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
অথচ বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জোটে নি। এবারের নিয়োগে চরম দুর্নীতির অভিযোগ এনে তিনি ও এলাকাবাসী মিলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের দাবি, যেহেতু ৫ নম্বর ওয়ার্ডে যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, সে হেতু দফতরের নিয়ম-নীতি মেনে তাঁকেই নিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় সঠিক তদন্ত করে দফতরের নির্দেশিকা মেনে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ করতে হবে, না-হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলবে।
এদিকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুপ্রীতা দাস জানান, তিনি এসে তালাবন্ধ দেখে বাইরে মাঠে ক্লাস করিয়ে চলে যান। তবে স্বীকার করেছেন, তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দফতরের তরফ থেকে অতিসত্বর সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।