দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই সংসদ চত্বরের নিরাপত্তার ভার সিআইএসএফের হাতে চলে গেল। কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী বা সিআইএসএফ দেশের সব বিমানবন্দর থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে কেন সংসদের নিরাপত্তার ভার তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সাংসদদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের প্রশ্ন, ‘‘সংসদ কি কোনও শিল্প? তা হলে শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়োগ করা হচ্ছে কেন? না কি এটা মোদী-শাহের সংসদ নিয়ন্ত্রণ করার নতুন চেষ্টা?”
সরকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারই সিআইএসএফ-এর ৩,৩০০-রও বেশি কর্মীকে সংসদ চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবারই সংসদ চত্বর থেকে সিআরপিএফ-এর পার্লামেন্ট ডিউটি গ্রুপ, তাদের সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা এবং অপারেশনাল সম্পদগুলিকে সরিয়ে নিয়েছিল। যানবাহন, অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি সরিয়ে নেওয়া হয় কমান্ডোদেরও। পার্লামেন্ট ডিউটি গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন সিআইএসএফ-এর একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। তিনিই সমস্ত কিছু সিআইএসএফ গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করেন।
সংসদ চত্বরে অবস্থিত পুরানো এবং নতুন – দুই সংসদ ভবন এবং অন্যান্য কাঠামোগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন থেকে সিআইএসএফ-এর। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৩,৩১৭ জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক ধরা পড়েছিল। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল। তার ঠিক ১২ বছর পর ফের সংসদে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেদ তৈরি হয়। সংসদে জিরো আওয়ার চলাকালীন গ্যালারি থেকে লোকসভা কক্ষের মধ্যে ঝাঁপ দেন দুই ব্যক্তি। লোকসভার মধ্যে একটি ক্যানিস্টার থেকে হলুদ ধোঁয়াও ছাড়েন। একই সময়ে, সংসদ চত্বরের বাইরে আরও দুই ব্যক্তি স্লোগান দিতে দিতে ক্যানিস্টার থেকে রঙিন ধোঁয়া ছড়িয়েছিলেন।
এই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনার পর, সামগ্রিকভাবে সংসদ চত্বরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখতে এবং উপযুক্ত সুপারিশ করার জন্য সিআরপিএফ-এর ডিজির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্র। ওই কমিটি সংসদ চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সিআরপিএফ-এর হাত থেকে সিআইএসএফ-এর হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশ মেনে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সংসদ চত্বরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে সিআইএসএফ-এর কাউন্টার টেরোরিজম সিকিউরিটি ইউনিট।
সিআইএসএফ-এর এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, দায়িত্ব গ্রহণের আগে ১০ দিন ধরে সংসদ চত্বরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন সিআইএসএফ কর্মীরা। বাহিনীর পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের উর্দি হিসেবে সাফারি স্যুট এবং হালকা নীল রঙের ফুলহাতা শার্ট ও বাদামী প্যান্ট পরতে হবে। সিআরপিএফের ছয়-ব্যাটালিয়নের যে ভিআইপি সুরক্ষা শাখা রয়েছে, সেই শাখার সঙ্গে সিআইএসএফ-এর পিডিজি ইউনিটকে একীভূত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিআরপিএফ পিডিজি দায়িত্ব নেওয়ায় সিআরপিএফ কর্মীদের পাশাপাশি, দিল্লি পুলিশের প্রায় ১৫০ জন কর্মী এবং পার্লামেন্ট সিকিউরিটি স্টাফদেরও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত এই দুই বাহিনী যৌথভাবে সংসদের সুরক্ষায় মোতায়েন ছিল। শুধুমাত্র সংসদের সুরক্ষার জন্যই পার্লামেন্ট সিকিউরিটি স্টাফ বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পিএসএ কর্মীদের অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হতে পারে। পিএসএস কর্মীদের কয়েকজনকে মার্শালের দায়িত্বে রাখা হতে পারে। এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।