দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ জুন মাস প্রাইড মান্থ। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের অধিকার নিয়ে লড়ার, লিঙ্গ নিরপেক্ষতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই আলাদা একটা মাসের উদযাপন। এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটির জন্য তো বটেই, গোটা পৃথিবীর বহুত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস হল জুন। কেন ? প্রান্তিক যৌন পরিচয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার গুরুত্ব কোথায়?
প্রথমেই মনে রাখা দরকার, সমকামী অধিকার আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। যবে থেকে প্রাইড মান্থ পালিত হয়, তার বহু আগে থেকেই চলে আসছে এই লড়াই৷ ১৯২৪ সালে হেনরি জার্বের নামে একজন জার্মান অভিবাসী শিকাগোতে প্রতিষ্ঠা করেন 'সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস'। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সংগঠনটিই প্রথম গে রাইটস নিয়ে প্রচার করত। ১৯৫৫ সালো ডেল মার্টিন এবং ফিলিস লিয়ন্স 'ডটারস অফ বিলিটিস' নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন। সেই সংস্থাটি সোচ্চারে লেসবিয়ানদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াত। এরপর ১৯৬০ এর দশকে তৈরি গয় Mattachine society, তারা ফিলাডেলফিয়ায় সমকামী অধিকারের স্বপক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
১৯৫৯ সালের মে মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলজিবিটিকিউ+ অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। ক্রমাগত পুলিশি হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। পুলিশের দিকে ডোনাট, কফি, কাগজের প্লেটের বৃষ্টি হতে থাকে৷ তাঁদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। তাঁরা আবার বড় সংখ্যায় ফিরে আসেন।
১৯৭০ সালে শিকাগোতে প্রথম গে প্রাইড প্যারেড মার্চ হয়। প্রায় একই রকম কর্মসূচি পালিত হয় নিউ ইয়র্কে। এই দুটি প্রাইড মার্চ বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেক লড়াই, রক্তক্ষরণ, প্রতিবাদ বিক্ষোভের পর বিশ্বজুড়ে সমপ্রেম অনেকটা পথ হেঁটেছে। আপাতত, বিশ্বের ৩৪টি দেশে সমলিঙ্গ বিবাহ আইনের চোখে বৈধ। এর মধ্যে ২৪টি দেশের আইনসভা সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১০টি দেশের ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত। এবার, আমাদের দেশের ছবিটা একটু উলটে পালটে দেখা যাক।
সমলিঙ্গ বিয়েকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষমতা দেশের শীর্ষ আদালতের নেই। বিশেষ বিবাহ আইন পরিবর্তন করা সংসদের কাজ, ২০২৩ এর অক্টোবরে একথা জানিয়েছে আমাদের দেশের শীর্ষ আদালত।
অথচ, মামলার রায়দানের প্রক্রিয়া চলাকালীন আদালত জানিয়েছিল, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে।’’ সমকাম কোনও শহুরে বিষয় নয় বলেও উল্লেখ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। চূড়ান্ত রায়দানের আগে আদালতের এ ই সব পর্যবেক্ষণ দেখে অনেকেরই প্রাথমিক ধারণা হয়েছিল সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দিতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু হলো সম্পূর্ণ উল্টো।
আদালত জানিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিশেষ বিবাহ আইন বাতিল করা বা এই আইনে কোনও শব্দ যোগ করার ক্ষমতা আদালতের নেই। এটা সম্পূর্ণ ভাবেই আইন প্রণয়নের বিষয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে অসংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে সমকামী সম্পর্ককে আইনি স্বীকৃতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।