দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আধুনিকতা ও পরিবর্তনের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে বাঙালি ভুলতে বসেছে তার শিকড় কে।বাঙালি ভুলেছে না না লোকায়ত আচার অনুষ্ঠান কে। যেমন এখন অনেকের কাছেই ক্রিসমাসটা ট্রেন্ডে থাকলে পৌষ পার্বণ জাস্ট ব্যাক ডেটেট। অথচ এককালে অতি ধুমধাম করে পালিত হত বাঙালির পৌষ পার্বণ। পুরনো বাংলা সাহিত্যেও এই পৌষ সংক্রান্তির নানা দৃষ্টান্ত আছে। বাংলার লোকসাহত্যিকদের লেখনীতে বার বার সেই সব লোকায়ত সংস্কৃতির কথা উঠে এসেছে। যদিও এখন সে সবই স্মৃতি আর সাহিত্যের পাতায় আবদ্ধ।
এই সংক্রান্তির আগে গাঁয়ে-ঘরে সব চেয়ে বেশি যেটা শোনা যেত তা হল, ঢেঁকির ওঠা-পড়ার শব্দ আর তার সঙ্গে ঢেঁকির গান। গ্রামে গ্রামে ঢেকিতে, গানের সুরের মধ্যে দিয়ে চাল গুঁড়ো করার ছবিও গ্রামবাংলার এক চিরন্তন ছবি হয়ে থেকেছে। চাল ছাঁটা কলের দাপটে ঠেকি আজ লুপ্তপ্রায়। এর পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে আরো একটি জিনিস, তা হল আউনি বাউনি। একালের ছেলেমেয়েরা হয়তো 'আউনি বাউনি' কী বস্তু ভেবে আশ্চর্যই হবে। আউনি বাউনি হল পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ঘরে ঘরে যে উৎসব পালিত হয় তার অন্যতম প্রধান ও প্রাথমিক অংশ।
আসলে পুণ্যস্নানের অনুষঙ্গ বাদ দিলে পৌষ সংক্রান্তি মূলত একটি শস্যোৎসব। এই উৎসব আদতে ছিল ক্ষেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষক পরিবারে পালনীয় এক বিশেষ অনুষ্ঠান। এরই জেরে পৌষ সংক্রান্তির দিন দু-তিনটি ধানের শিষ বিনুনি করে 'আউনি বাউনি' তৈরি করা হয়। শহরাঞ্চলে আজকাল শিষের অভাবে দু-তিনটি খড় একত্রে লম্বা করে পাকিয়েও আউনি-বাউনি তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে ধানের শিষ, মুলোফুল, সরষেফুল, গাঁদাফুল, আমপাতা ইত্যাদি বেঁধে দেওয়া হয়। এই আউনি বাউনি আগেকার দিনে ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-পেঁটরা-তোরঙ্গ ইত্যাদির উপরে এবং ঘরের খড়ের চালে গুঁজে দেওয়া হত। এখন রান্নাঘরে চালের হাঁড়়িতে, ঘরে যে লক্ষ্মীপ্রতিমা বা পট পুজো করা হয় সেখানে এবং আলমারি ইত্যাদিতে দেওয়া হয়।
কালের প্রবাহে লোকাচারের কিছু কিছু জিনিস ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হবে এ কথা বাস্তব। তবে সেসব যতদিন এবং যতটুকু ধরে রাখা যায় ততটাই লাভ। লাভ উত্তরপ্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে তারা ও জুড়ে থাকবে শিকড়ের সঙ্গে।