দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বিপত্তারিণীর আশীর্বাদে জীবন থেকে দূর হয় যে কোনও বিপদ। দেবী তাঁর ভক্তদের রক্ষা করেন ফলে বিপদ কাছে ঘেঁষতে পারে না।আষাঢ় মাসের সোজারথ ও উল্টোরথের মাঝের মঙ্গলবার ও শনিবার দেবী বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করা হয়। সাধারণত বাড়ির মেয়ে-বৌরা এই ব্রত পালন করে থাকেন। যে কোনও একটা দিন পালন করলেই চলে। তবে এই ব্রত পালনের নানা নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই আসে ১৩টা করে সব কিছু নেওয়া। এমনকি ব্রত ভাঙতেও হয় ১৩টা লুচি খেয়ে। জোড় সংখ্যার কোনও কিছু তো নেওয়া যায়ই না, অন্যান্য বিজোড় সংখ্যার থেকে ১৩ সংখ্যার সব কিছু নিতে পারলেই ভাল হয়। প্রতি বছর দু'দিন করে পড়ে বিপত্তারিণী পুজো। এবছর বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করা যাবে ২৮ জুন (১৩ আষাঢ়), শনিবার এবং ১ জুলাই (১৬ আষাঢ় ), মঙ্গলবার।
ব্রত পালনে কী কী লাগে?
ঘট, আম্র পল্লব, শীষ সহ ডাব, একটি নৈবেদ্য, ১৩ টি গিঁট দেওয়া লাল সুতো (সঙ্গে ১ত টি দূর্বা বাঁধা), ১৩ রকম ফুল, ১৩ রকম ফল, ১৩ গাছি লাল সুতো, ১৩টি দূর্বা, ১৩টি পান ও ১৩টি সুপুরি।
বিপত্তারিণী পুজোর নিয়মকানুন:
ব্রতর আগের দিন নিরামিষ আহার করলে ভাল। উপবাস করে নিষ্ঠা করে সব উপকরণ দিয়ে মা বিপত্তারিণীর পুজো করতে হয়। পুজো শেষে ১৩ টা লুচি ও ১৩ রকমের ফল খেতে হয় প্রসাদ হিসাবে। পুজো হয়ে গেলে ঠাকুরের পায়ে অর্পণ করা ১৩ টি গিঁট দেওয়া লাল সুতো (ডোর) হাতে বেঁধে নিতে হয়। এই লাল সুতো মেয়েদের বাম ও ছেলেদের ডান হাতে পড়তে হয়। এটি অন্তত তিনদিন হাতেই রাখার নিয়ম।
বিপত্তারিণী পুজোর বিধি নিষেধ:
* বিপত্তারিণী পুজোর আগের দিন নিরামিষ এবং পুজো শেষে ১৩ টা লুচি ও ১৩ রকমের ফল খেতে হয় প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করুণ। তবে চাল বা গমের জিনিস খাওয়া একেবারেই নিষেধ। কোনও অপরিচ্ছন্ন স্থানে বিপত্তারিণী পুজো করবেন না। নয়তো ঘরের সুখ ও শান্তির নষ্ট হয়।
* পুজোর চলাকালীন কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। এর ফলে দেবী ক্রুদ্ধ হতে পারেন এবং অর্থ সম্পর্কিত সমস্যা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ব্যবসায় ক্ষতি, বাড়িতে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
* বিপত্তারিণী পুজোর সময় কখনই কাউকে অপমান করবেন না। এমনকি এদিন কোনও মহিলার সম্পর্কে কুরুচিকর কথা বলবেন না। এতে মা লক্ষ্মী ক্রুদ্ধ হন।
* এদিন পরিবারের নিকট সদস্য ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে টাকা দেবেন না ও নিজেও ধারও করবেন না। মনে করা হয় এই সময় প্রদত্ত অর্থ ফেরত আসে না। সেই সঙ্গে, দেবী রুষ্ট হন এবং সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়।
* এই পুজোর দিন পরিবারের কোনও সদস্যের মদ্যপান করা এড়ানো উচিত।
* বিপত্তারিণী পুজোর দিন কাউকে চিনি দেবেন না। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, চিনির শুক্র এবং চন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে শুক্র বস্তুগত সুখের কর্তা। তাই এদিন চিনি দিলে শুক্র দুর্বল হয় এবং সংসারে অশান্তির পাশাপাশি আর্থিক সংকট দেখা দেয়।
বিপত্তারিণী পুজোয় ১৩ সংখ্যার মাহাত্ম্য কী?
স্বামী, সন্তান ও পরিবারের মঙ্গলকামনায় বিবাহিত মহিলারা বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করে থাকেন। এই ব্রত পালনের বিশেষ নিয়ম হল দেবী বিপত্তারিণীকে সব কিছু ১৩টা করে উৎসর্গ করতে হবে। ব্রতর আচার হিসাবে সব কিছুই ১৩ সংখ্যায় দিতে হয়। অর্থাৎ, ১৩ রকমের নৈবেদ্য সাজাতে হয়। এ ছাড়া লাগে তেরো রকম ফল, তেরো রকম ফুল, তেরোটি পান, তেরোটি সুপুরি, তেরোটি এলাচ। ব্রত পালনের দিন চাল-মুড়ি-চিঁড়ে জাতীয় কোনও জিনিস খাওয়া যায় না। বদলে ১৩টি লুচি ও ফল দেবীর প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করতে হয়। ১৩টি করে সব ব্যবহারের কারণ হিসাবে বিশেষ কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। কথিত রয়েছে, মা বিপত্তারিণীর পছন্দের সংখ্যা হল ১৩। সে কারণেই এই পুজোয় দেবীর কাছে সমস্ত জিনিস ১৩টি করে অর্পণ করা হয়। শাস্ত্রমতে, ১৩ সংখ্যাটি ব্যবহার করলে দেবীর আশীর্বাদ লাভ করা যাবে। এতে যে কোনও বিপদ থেকে দেবী আমাদের রক্ষা করবেন। ১৩ সংখ্যাটিকে দেবী বিপত্তারিণীর আশীর্বাদ ও সুরক্ষার প্রতীক মনে করা হয়।
বিপত্তারিণী পুজোয় লাল রঙের তাগা কেন বাঁধা হয়?
বিপত্তারিণীর পুজো শেষে হাতে লাল তাগা বাঁধার চল রয়েছে। মেয়েরা এই তাগা বাঁ হাতে পরেন আর ছেলেরা ডান হাতে পরেন। সেই তাগাতেও ১৩টি গিঁট বাঁধা হয়। সেই ১৩টি গিঁটে দেবী দুর্গার ১৩টি রূপে বিরাজ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ১৩টি গিঁট ছাড়াও তাতে ১৩টি দূর্বাঘাস বাঁধা হয়। এই তাগা অনেকে সারা বছর ধরে পরে থাকেন, অনেকে আবার তিন দিন পরার পর নদী বা পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেন। বিশ্বাস করা হয় যে, এই তাগা হাতে পরলে বিপদ কোনও দিন আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। মা বিপত্তারিণীর আশীর্বাদ সর্বদা আপনার সঙ্গেই থাকবে।