দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা উৎসব। আর এই বিশেষ উৎসবে বলরাম, জগন্নাথ, সুভদ্রার বিশেষ পুজোর আয়োজন করেন ভক্তরা। জ্যোতিষশাস্ত্রে, হিন্দুধর্মে চার ধামের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই চারধামের অন্যতমই হল পুরীর জগন্নাথ মন্দির। পুজোর সময় জগন্নাথদেবকে ৫৬ টি ভোগ নিবেদন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল খিচুড়ি। আপনি কি জানেন জগন্নাথ দেবকে কেন খিচুড়ি নিবেদন করা হয়?
কর্মাবাই নামে একজন বৃদ্ধা পুরীতে বাস করতেন। তিনি জগন্নাথকে নিজের পুত্র রূপে দেখতেন এবং তাঁকে বালক রূপে পুজো করতেন। তাঁর মনে হত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জগন্নাথ দেবের খিদে পেয়ে যায়। তাই তিনিও খুব সকালে ঘুম থেক উঠে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করতে বসতেন। সকাল সকাল বালক রূপ ধরে জগন্নাথদেব কর্মাবাইয়ের পর্ণকুটিরে যেতেন এবং সেই খিচুড়ি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। এই খিচুড়ির স্বাদ ছিল তাঁর বড়ই প্রিয়।
এভাবেই চলছিল। একদিন এক সাধু, কর্মাবাইকে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করতে দেখেন। তিনি কর্মাবাইকে নিষেধ করে বলেন যে প্রভুর ভোগ রান্না এবং নিবেদনের আগে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। পরদিন সাধুর কথামতো কর্মাবাই স্নান সেরে নিয়ম মেনে যখন জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি ভোগ দেন। তখন বেলা গড়িয়ে মন্দিরে দুপুরের ভোগের সময় হয়ে গিয়েছিল। এদিকে সকাল থেকে কিছু না খেতে পেয়ে জগন্নাথও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। কর্মাবাইয়ের খিচুড়ি হতেই গপ গপ করে সেই খিচুড়ি খেয়ে মন্দিরে ফেরেন। পুরোহিতরা দেখলেন যে জগন্নাথ দুপুরে কিছু খাচ্ছেন না। তাঁর মুখে খিচুড়ি লেগে রয়েছে। জগন্নাথকে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাধুর কীর্তির কথা বলেন। তাঁর মুখে সমস্ত কথা শুনে মন্দিরের পুরোহিতেরা লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হন এবং কর্মাবাঈয়ের কাছ ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন যে, তিনি যেন আগের মতোই সকালে স্নানের আগেই জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন।
এরপর একদিন দেখা যায় জগন্নাথ দেব খুব কাঁদছেন। তাঁর খিদে পেয়েছে। পুরোহিতরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে প্রভুর 'মা' কর্মাবাই মারা গেছেন। তাই তাঁকে খিচুড়ি রেঁধে খাওয়ানোর কেউ নেই। এরপর রাজার নির্দেশে পুরী মন্দিরের বাল্যভোগে সেই খিচুড়ি রান্না শুরু হয়। জগন্নাথ দেবের কথা মতো সেই খিচুড়ির নাম হয় ‘কর্মাবাই খিচুড়ি’।