কলকাতা, ২ জুলাই : মধ্য আষাঢ়-এ তখন কলেজের বাইরে রোদ বৃষ্টির খেলা। প্রকৃতির সেই খামখেয়ালিপনা তোয়াক্কা না করেই এক বিশেষ শপথ নিতে এগিয়ে এল ৪১ জন তরুণী। এরা সকলেই কলকাতার শতবর্ষ প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লরেটো কলেজের পড়ুয়া। মঙ্গলবার কলেজের কনসার্ট হলে দাঁড়িয়ে শপথ নিল লরেটোর নবনির্বাচিত স্টুডেন্ট কাউন্সিল বা ছাত্র সংসদ পরিচালনা করার। উল্লেখ্য, এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বা 'ইনভেস্টিচার সেরেমনি' এই কলেজের বহুবছরের এক অনন্য রীতি, যা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের গরিমার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।
এবছরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিস্টার সাবরিনা এডওয়ার্ডস। টিচার ইন চার্জ সিস্টার ডঃ এ নির্মলা ও কলেজের আইকিউএসি কো - অর্ডিনেটর ডঃ অমৃতা দাশগুপ্ত। পাশাপশি এদিন আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন লরেটো হাউসের মাদার সুপিরিয়র সিস্টার এ এরোকিয়া পাওলিন, লরেটো এডুকেশন বোর্ডের অধিকর্তা নন্দিনী ভট্টাচার্য, আইনজীবী দেবযানী মিত্র নিয়োগী এবং শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ তানিয়া চক্রবর্তী। এদিন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক ডঃ অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডঃ দেবশ্রী সিনহা।
সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ–এর আবহে প্রদীপ জ্বালিয়ে সূচনা হয় এই অনুষ্ঠানের। মঞ্চের একেবারে বাঁ দিকে একটি বিশাল গাছের প্রতিকৃতি এবং তাতে সংহতি, ধৈর্য, সহানুভূতি-র মত একগুচ্ছ শব্দপত্র। দর্শকাসনে থাকা অভিভাবক ও অতিথিদের বুঝে নিতে অসুবিধে হচ্ছিল না যে এবছরের অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা "To Lead is to Serve" অর্থাৎ সেবাই নেতৃত্বদানের সোপান।
আলাপন বাবু তাঁর বক্তব্যে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান নেতৃত্বদানের এই সংজ্ঞাকে অনুষ্ঠানের মূল সুর হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য। জানান, বাংলা তথা গোটা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান একেবারে ব্যতিক্রমী এক প্রয়াস।কলেজের তরফে জানানো হয়েছে, এবারের স্টুডেন্ট কাউন্সিলে প্রথম পাঠ্যক্রম বহির্ভূত সোসাইটিগুলির সঙ্গে নতুন সংযোজন হয়েছে বিভিন্ন সেল/কমিটির। এর উদ্দেশ্য, কলেজ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ভাবনা। এটি পড়ুয়াদের বৃহত্তর সমাজের এক একজন সুচিন্তিত নাগরিক রূপে তৈরি করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন আলাপন বাবু।