দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ গন্ধেশ্বরী দুর্গারই একটি অংশ বিশেষ। চতুর্ভুজা দেবী গন্ধেশ্বরীর ধ্যান মন্ত্রে বলা হয়- 'দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নঃ', অর্থাৎ 'হে দেবী, আপনি আমাদের নিকট দুর্গতিহারিণী দুর্গাস্বরূপা হোন। দুর্গতিহারিণী দুর্গা রূপে আমাদের দুঃখ বিনাশ করুন।' দুর্গা ও গন্ধেশ্বরী উভয়েই সিংহ বাহিনী এবং অসুরমর্দিনী।
গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা এইদিন তাঁদের হিসেব খাতা এবং ওজন পরিমাপের যন্ত্র দেবীর সামনে সাজিয়ে রাখেন। গন্ধেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়েই সারা বছরের ব্যবসার সমৃদ্ধি কামনা করা হয় এই দিনে। ধনপতি সৌদাগর, শ্রীমন্ত সৌদাগর, চাঁদ সৌদাগরের সময় থেকে বাণিজ্যে যশ খ্যাতি অর্জন করেছে এই গন্ধবণিক সম্প্রদায়।
বাঙ্গালীর হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম দেবী গন্ধেশ্বরীর পুজো। এছাড়া বৌদ্ধ ধার্মালম্বীরাও এই পুজো পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে, অন্যান্য হিন্দু দেব দেবীর সঙ্গে গন্ধেশ্বরীরও একটি মূর্তি আছে। তবে সেটি ঐ বৌদ্ধ বিহারের মত খুব প্রাচীন নয়। গন্ধেশ্বরী দেবী আদ্যাশক্তি দুর্গারই অন্যরূপ। গন্ধেশ্বরীর রূপ অনেকটা জগদ্ধাত্রীর রূপের মতই। এঁর হাতে ও শঙ্খ, চক্র, ধনুর্বান শোভা পায়।
গন্ধবণিক হল বাঙালি হিন্দু বণিক সম্প্রদায় যারা মূলত গন্ধ দ্রব্যের ব্যবসা করে থাকেন। গন্ধ দ্রব্য যেমন বিভিন্ন সুগন্ধি প্রসাধনী, সুগন্ধি ধূপ, সুগন্ধি দেশ বিদেশের মশলা ইত্যাদি। চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন গন্ধবণিক সম্প্রদায়কে হিন্দু বণিক সম্প্রদায় বলে উল্লেখ করেন। এই গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের কূলদেবী হলেন গন্ধেশ্বরী। সিংহের উপর আসীন এই দেবীর চার হাত। ত্রিশুল দিয়ে গন্ধাসুরকে বধ করেন।
প্রাচীনকালে বণিকরা ময়ূরপঙ্খী ভাসিয়ে চলতেন বাণিজ্যে। পথে যেমন ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি আশঙ্কা ছিল। তেমনই ডাকাত, বন্য জীবজন্তুর ভয় ছিল। এই সবের থেকে গন্ধেশ্বী তাঁদের রক্ষা করবেন, এই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় গন্ধেশ্বরীর পুজো।