
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তীর জীবনে নেমে এসেছে নতুন আলো। বহুদিন ধরেই তিনি কলকাতার বাইরে ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা ঘনিষ্ঠ মহল—সবাইকে তিনি জানিয়েছিলেন যে লাস ভেগাসে শুধুই ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিকল্পনা যেন আরও বৈচিত্র্যময় ছিল। প্রবাদে যেমন বলা হয়, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে—তিন ঘটনার উপর মানুষের তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেই কথাটাই যেন সত্যি করলেন অভিনেত্রী। কারণ ছুটির ছলে বিদেশে গিয়েই সম্পন্ন হয়ে গেল তাঁর বিয়ে। আর সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, এই বিয়ের পরিকল্পনা তিনি আগেভাগে জানতেনই না।
জানা গেল, আটলান্টায় বসবাসকারী আইটি বিশেষজ্ঞ সুজিত বসুই নাকি এই সারপ্রাইজ বিয়ের আয়োজন পুরো গোপনে সারেন। দীর্ঘ আটাশ বছর ধরে তিনি বিদেশে কাজের সূত্রে বাস করছেন। টেকনোলজিস্ট হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। আর সেই বিদেশেই এবার পা রাখলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—তনুশ্রী চক্রবর্তীকে বিয়ে করা।
তাদের প্রেমের বয়স মাত্র পাঁচ মাস। খুব বেশি সময়ের সম্পর্ক নয়, তবুও সেই অল্প সময়েই একে অপরকে এতটাই কাছ থেকে চিনেছেন যে আর দেরি না করে সম্পর্ককে নতুন পথ দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিচয় হয়েছিল এক বন্ধুর মাধ্যমে। সেই প্রথম আলাপ থেকেই একটি আন্তরিক বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সেই সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। এরপর সুজিত একটি হিরের আংটি দিয়ে অভিনেত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন—যা ছিল তনুশ্রীর কাছে জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্তগুলোর একটি। লাস ভেগাসে ছুটি কাটাতে যাওয়া যে এভাবে স্বপ্নের বিয়ে হয়ে দাঁড়াবে, তা নায়িকা নিজেও কল্পনা করেননি। কিন্তু সুজিত যখন সবকিছু গুছিয়ে ফেলে বললেন, “চলো, বিয়েটা এখানেই করে ফেলি,” তখন অবাক হলেও রাজি হয়ে যান অভিনেত্রী। যেহেতু পরিবারের লোকজন উপস্থিত থাকতে পারেননি, তাই ভিডিও কলে মা-বাবাকে সাক্ষী রেখেই সম্পন্ন হয় শুভবিবাহ। সিনেমার মতোই রোমান্টিক দৃশ্য—বিদেশের মাটিতে, সাদা গাউন পরে নববধূ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন অভিনেত্রী; পাশে কেতাদুরস্ত পোশাকে বর সুজিত বসু—যেন স্বপ্নের জলছবি।

বাঙালি রীতিতেও যে তাদের টান আছে, সেটাও স্পষ্ট হয় বিয়ের ছবিতে। হোয়াইট ওয়েডিংয়ের সাজের সঙ্গে তনুশ্রীর হাতে দেখা যায় শাঁখা-পলা, আর সিঁথিতে লাল সিঁদুর—দুই সংস্কৃতির নিখুঁত মিশেল। এভাবেই অচেনা দেশে, অচেনা পরিবেশে, শুধু সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে পাশে নিয়ে বিয়ের অনবদ্য মুহূর্ত সৃষ্টি করলেন যুগল। বিয়ের পরে মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনাও তৈরি। নববধূ নিজেই নাকি বরের জন্য বিশেষভাবে সাজিয়ে রেখেছেন ফ্লোরিডা ভ্রমণের প্ল্যান। রোদ, সমুদ্র, আর ব্যক্তিগত সময়—সমস্তটাই থাকবে সেই সাজানো ছুটির মধ্যে।
সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে তনুশ্রী জানালেন, “আমাদের সম্পর্ক মাত্র পাঁচ মাসের, কিন্তু এত দ্রুত একে অপরকে বুঝে উঠতে পেরেছি যে সময় নষ্ট করার কোনও মানে ছিল না। দেশে ফিরে বিয়ে করার কথাই ভেবেছিলাম। কিন্তু এখানে এমনভাবে আয়োজন হয়ে যাবে, ভাবিনি।” তাঁর কণ্ঠে ছিল আনন্দের ছোঁয়া, পাশাপাশি উত্তেজনা। সুজিত নাকি তাঁর কাজকে খুবই শ্রদ্ধা করেন। তনুশ্রীর মতে, এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় পাওয়া—একজন জীবনসঙ্গী, যিনি তাঁর পেশাকে সম্মান দেবেন, বুঝবেন এবং সমর্থন করবেন।
তবে বিয়ের পর তিনি কি টলিউড ছেড়ে মার্কিন মুলুকে স্থায়ী হবেন? এই প্রশ্নেই এখন সবচেয়ে বেশি আগ্রহ অনুরাগী মহলের। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দেশ-বিদেশ দুই জায়গাই সামলাবেন। অভিনয়ও চলবে আগের মতোই। কারণ অভিনয় তাঁর প্রথম ভালোবাসা, যা তিনি ছাড়তে চান না। তবে টলিপাড়ার বন্ধুদের জন্য আলাদা কোনও রিসেপশনের আয়োজন করছেন কি না—সেই কৌতূহল তিনি জিইয়ে রেখেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, একেবারে রূপকথার মতোই বিয়ে হলো তনুশ্রী চক্রবর্তী ও সুজিত বসুর। প্রেম থেকে বিয়ে—সবটাই ঘটল খুব কম সময়ে, কিন্তু স্নিগ্ধতায় ভরা, আবেগে টইটুম্বুর। নতুন জীবনে পা রেখে তাঁদের শুভকামনায় ভরে উঠেছে ভক্তমহল ও টলিউড।
