
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: পূর্ব বর্ধমানের ঘটনার পর এবার আলিপুরদুয়ার জেলায় আরও একজন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-এর মৃত্যু হলো। অভিযোগ উঠেছে যে, ডুয়ার্সের মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা বাগান এলাকার নিবাসী শান্তিমুনি ওঁরাও (বয়স ৪৮) কাজের অতিরিক্ত চাপে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছিলেন এবং রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০/১০১ নম্বর বুথের বিএলও-এর দায়িত্বে ছিলেন। বুধবার সকালে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি একটি গাছে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, কমিশনের ‘অবিবেচনাপ্রসূত কাজের পদ্ধতির’ কারণেই রাজ্যে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে।
পরিবারের অভিযোগ, বিএলও হওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে পারছিলেন না শান্তিমুনি। সারাদিন অঙ্গনওয়াড়ির কাজ, তার পর বাড়ির বিভিন্ন দায়িত্ব সামলে রাতের বেলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম পূরণ করানো, সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। মৃতার স্বামী সুখ এক্কা বলেন, “ফর্ম সব বাংলায়। কিন্তু এখানে বেশিরভাগই হিন্দিভাষী মানুষ বাস করেন। ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতি দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে লোকজন আসত। ও এই চাপ নিতে পারছিল না। কাজ থেকে অব্যাহতি চাইতে ব্লকে গিয়েছিল। কিন্তু ওকে বলা হয়, নাম আছে, কাজ করতেই হবে। এই কথাই তাকে আরও ভেঙে দেয়।” মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যান শান্তিমুনি। ভোরে তিনি রান্নাঘরে যান। কিন্তু মঙ্গলবার সেখানে তাঁকে না দেখে খোঁজ করা হয়। তখনই বাড়ির পাশে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাল থানার পুলিশ গিয়ে ওই বিএলও-র দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার খান্ডেবাহালে উমেশ গণপথ বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ বিএলও-র মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এবং আদিবাসি উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক। তিনি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘‘এসআইআর ফর্মের কাজ নিয়ে সর্বত্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত হিন্দিভাষী এই অঞ্চলে বাংলায় ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে একের পর এক ভুল হচ্ছিল। সেই আতঙ্ক এবং মানসিক চাপে পড়ে শান্তিমুনি শেষ পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ করেছেন।’’ মন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘মৃতার পরিবারটির পাশে রাজ্য সরকার থাকবে।’’
