দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- আজ ভোরের দিকে জিরিবাম জেলার নুংচাপ্পি গ্রামে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিদের হামলায় ৬৩ বছর বয়সি ইউরেম্বাম কুলেন্দ্র সিং-এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। প্রায় একই সময় জিরিবামের ডিবং খুনউ রসিদপুর গ্রামে পৃথক এক সহিংসতার ঘটনায় ৪১ বছরের বাসপতিময়ুম লখি কুমার শর্মা মারা গিয়েছেন।
আজ মণিপুরের আইজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আইপিএস কাবিব কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির তথ্য দিতে গিয়ে এ খবর জানান। তিনি বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কুকি জঙ্গিরা ক্রমাগত ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় হতাহতের ঘটনা এবং অশান্তি সৃষ্টি করেছে। তাই মণিপুর পুলিশ ড্রোনের দ্বারা সৃষ্ট হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করতে একটি উন্নত অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করেছে৷ এই পদক্ষেপের লক্ষ্য, অত্যাধুনিক জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে রাজ্যকে সুরক্ষা দেওয়া।
আইজিপি ইন্টেলিজেন্স কাবিব জানান, গতকাল বিকালে কুকি জঙ্গিরা বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদ জেলার মধ্যবর্তী জনবসতি অঞ্চলে দুটি দূরপাল্লার রকেট সংস্থাপন করেছিল। রাতে রকেট থেকে ছোঁড়া হয় শেল। শেলের ঘায়ে ফিওয়াংবাম লেইকাইয়ের নামের জনৈক আরকে রাবেই (৭৮)-এর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এক নাবালিকা সহ অন্য ছয়জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সশস্ত্ৰ পুলিশের দল এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী জেলার পার্বত্য রেঞ্জে ছুটে গিয়েছে। বিষ্ণুপুরের পুলিশ সুপার দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা তাঁদের ওপর গুলি চালায়। তবে পুলিশের দল পাল্টা জবাব দেওয়ায় জঙ্গিরা পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
এদিকে আকাশপথে টহল দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী মুয়ালসাং গ্রামে দুটি এবং চূড়াচাঁদপুরের লাইকা মুয়ালসাউ গ্রামে একটি সহ মোট তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করেছে।
আইপিএস কাবিব আরও জানান, গতকাল (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আরেকটি ঘটনায় দুষ্কৃতীদের এক মব খাবেইসোইতে ৭ নম্বর এমআর এবং ইমফলের ২ নম্বর এমআর থেকে অস্ত্র লুট করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কম্বাইন্ড সিকিউরিটি ফোর্স টিয়ারগ্যাস এবং গুলি ছুঁড়ে দলবদ্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে দুর্বৃত্তদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মবের দুর্বৃত্তায়নে দুই পুলিশ কর্মী ওসি-সিডিও/আইই ইন্সপেক্টর কে হেনরি এবং কনস্টেবল ইসাক গ্যাংমেই আহত হয়েছেন। তাঁদের শিজা হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে।
আইজিপি কবিব কে ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থা, সামরিক নজরদারি এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন সহ নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান। তিনি জানান, পরবর্তী আক্রমণ এড়াতে পার্বত্য ও উপত্যকা, উভয় অঞ্চলে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় চিরুণি অভিযান চলছে।
এছাড়া দায়িত্বশীল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আইজিপি বলেন, সহিংসতা প্ররোচনাকারী ব্যক্তিদের ট্র্যাক করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী লোইচিং রেঞ্জ, বিষ্ণুপুর-কাংপোকপি সীমান্তে লোইবল খুলেন এবং টিংকাই খুলেনের মধ্যবর্তী এলাকায় সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিদের ব্যবহৃত বহু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।