দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: গোড়ালি পর্যন্ত ঢাকা আটপৌরে শাড়ি, যেন তিস্তাপাড়ের গ্রামের বধূর রূপ মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমায়। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির আমগুড়ি বসুনিয়া বাড়ির পুজোর প্রতিমাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। জোর কদমে চলছে ‘দেবী ঠাকুরানি’র পূজোর প্রস্তুতি। আমগুড়ির কাছেই গরুমারা জাতীয় উদ্যানের রামশাই জঙ্গল, যেখানে পুজোর সময়ে ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। রামশাই ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও দেখে যান এই বিশেষ পূজো।
‘গেটওয়ে অফ ডুয়ার্স’ নামে পরিচিত ময়নাগুড়ি। তিস্তা পাড়ের জঙ্গল ঘেঁষা এই জনপদের অন্যতম প্রাচীন পূজা হলো বসুনিয়া বাড়ির পুজো। ১৮১০ সালে ধনবর বসুনিয়া এই পূজার সূচনা করেছিলেন। তবে প্রথমদিকে আয়োজন ছিল বেশ কঠিন। কারণ, তখন আমগুড়ি এলাকায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত বা ঢাকি কেউই ছিলেন না। চারপাশ ভরা ছিল গভীর জঙ্গলে। সেই সময় বাংলাদেশের রংপুর থেকে ঘোড়ার গাড়িতে প্রতিমা আনা হত। পরবর্তীতে ধনবর বসুনিয়ার ছেলে রংপুর থেকে এক মৃৎশিল্পী পরিবারকে এনে নিজের জমিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। একইভাবে অসম থেকে পুরোহিত ও ঢাকিদের নিয়ে এসে তাঁদেরও বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
মৃৎশিল্পী শ্রীমন্ত রায় বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রীমন্ত বলেন, “আগে বাবা এই প্রতিমা তৈরি করতেন। এখানে দেবী আসেন রাজবংশী বধূর সাজে। কারণ, এখানে তিনি চাষি ঘরের মেয়ে। পরনে আটপৌরে সাধারণ শাড়ি। যা গোড়ালির উপর পর্যন্ত ঢাকা। ঠিক যেমনটা দেখা যায় তিস্তাপাড়ের গাঁয়ের বধূকে। মুখের আদলে মঙ্গলীয় জনজাতির ছোঁয়া। কার্তিক, গণেশের পরনে ধুতি। সাজসজ্জার পাশাপাশি দেবীর অলঙ্কারও সাদামাটা। দেবীর বর্ণ রক্তিম।” জাঁকজমকহীন এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মেতে ওঠে গোটা গ্রাম।