
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শহরগুলি এখন সেজে উঠেছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বৃহত্তম উৎসব ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিন। তবে, এই পার্বণে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ ভুলে সকলেই একত্রিত হন। বাড়ি, অফিস, দোকান সহ রাস্তাঘাটও ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ এবং আলোর সজ্জায় আলোকময় হয়ে ওঠে। ক্রিসমাস ইভ। এই দিন থেকেই চারপাশ থেকে ক্যারলের (Carol) মিষ্টি ধ্বনি শোনা যায়। 'জিঙ্গল বেলস' গাইতে গাইতে ২৪ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বড়দিনের আগের রাতে (Christmas Eve) গোপনে শহরে আগমণ ঘটে এক মোটাসোটা ব্যক্তির (Santa Claus)। সাদা দাড়ি, লাল-সাদা টুপি, লাল পোশাকে সাজে সজ্জিত এবং কাঁধে একটি বিশাল ঝোলা নিয়ে তিনি সকলকে উপহার বিতরণ করতে বের হন—তিনিই হলেন সান্তা বুড়ো বা সবার প্রিয় সান্তা ক্লজ।শুধু শিশু কেন, অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক আজও মনে করেন বড়দিনের আগের রাতে তাদের কাছে সান্তা ক্লজ এসে উপহার দিয়ে যান। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। ক্রিসমাস ইভে নিজেদের বালিশের পাশে কিংবা ঘরের কোন স্থানে মোজা রেখে এবং অনেকেই আশায় থাকে সান্তার উপহারের। তবে জানেন কীভাবে শুরু হল এই মোজা রাখার রীতি? কোথা থেকেই বা শুরু এই চল?
সান্তা ক্লজের বাড়ি:
কানাডার মুস্কোকা গ্রামকে বলা হয় সকলের প্রিয় সান্তা ক্লজের বাড়ি। সেখনে সান্তার নামে একটি মেইলিং পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে আজও লক্ষ লক্ষ চিঠি পৌছায়। এই ডাকের কোডটি হল,' H0H0H0'। সেই থেকেই মনে করা হয়, সান্টা 'হোহোহো' করে হেসে উপহার দেবেন ২৪ ডিসেম্বর রাতে।
মেরি ক্রিসমাস:
যিশু খ্রিস্টের (Jesus Christ) জন্মদিন মানেই আনন্দের উৎসব। সব বিষাদ ভুলে একে- অপরের মুখে হাসি ফোটাতে চান সকলে। সেই থেকে বিশ্বাস, বড়দিনের ঠিক আগের রাতে তিনি স্লেজ গাড়ি চেপে পৌঁছে যান ঘরে ঘরে। সেই স্লেজ টানে বল্গা হরিণ। উপহারের পাশাপাশি তিনি মনোবাঞ্ছাও পূরণ করেন সকলের। তাই ২৪ ডিসেম্বর রাতে মোজা ঝুলিয়ে রাখা হয়, সেন্ট নিকোলাস বা সান্তা ক্লসের থেকে বিশেষ দিনে উপহার পাওয়ার আশায়।
সেন্ট নিকোলাসের গল্প:
সান্তা ক্লজকে নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। তার মধ্যে কথিত আছে, চতুর্থ শতাব্দীতে তুরস্কের (আগে এশিয়া মাইনর) সেন্ট নিকোলাস নামে এক বিত্তশালী ব্যক্তি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। ছোটবেলায় সে তার বাবা- মাকে হারায়। দুঃস্থদের সাহায্য করতেন তিনি। এমনকী অনেক সময় গোপনে তাদের জন্য উপহারও রেখে আসতেন। ওই দেশেই এক ব্যক্তি অর্থের অভাবে তার তিন মেয়েদের বিয়ে দিতে অক্ষম ছিলেন। একথা নিকোলাসের কানে আসা মাত্রই, তিনি সে ব্যক্তির বাড়ির ছাদে উঠে তার চিমনিতে সোনা ভরা থলি রেখে আসেন। ঘটনাচক্রে সেদিনই তিনি মোজা শুকোতে দিয়েছিলেন চিমনিতে।
নিকোলাস সে মোজাতেই সোনা ভরে দিয়েছিলেন। তবে একবার নয়, মোট তিনবার। সোনা দেওয়ার সময়ে শেষবার সেই ব্যক্তি নিকোলাসকে দেখে ফেলেছিলেন। তবে তিনি চেয়েছিলেন সকলের আড়ালে নিঃস্বার্থভাবে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে। তাই সাহায্যের কথা কাউকে জানাতে বারণ করেন। তাও বিষয়টি চাপা থাকে না। এই ঘটনার পর থেকে কেউ কোনও গোপন উপহার পেলেই মনে করতেন, বোধ হয় নিকোলাস দিয়েছেন। ধীরে ধীরে নিকোলাসের গল্প তুরস্ক পেড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে। জনপ্রিয় হয়ে নিকোলাস হয়ে ওঠেন সেন্ট নিকোলাস বা ফাদার নিকোলাস।
বড়দিনে উপহার:
এছাড়াও ২৫ ডিসেম্বর মাদার মেরি কোলে যখন আসেন ছোট্ট যিশু, তখন তিনজন জ্ঞানী মানুষ আকাশের তারা অনুসরণ করে বেথেলহামে পৌঁছান। যিশুকে দেখার পর তাঁরা সোনা, ধূপ এবং গন্ধরস উপহার দেন তাঁকে। শোনা যায় সেই থেকেই বড়দিনে উপহার আদান প্রদানের রীতি চলে আসছে।
