ওয়াটারলু (কানাডা), ১৯ অক্টোবর : ওয়াটারলু বলতে অধিকাংশ মানুষের প্রথমেই মনে পড়ে নেপোলিয়নের যুদ্ধক্ষেত্রের কথা। কিন্তু সে তো বহু যুগ আগের বিষয়! এখন ওয়াটারলু বলতে অনেক বাঙালির মনে পড়ে দুর্গাপুজোর কথাও।
কানাডার ওন্টারিওর ওয়াটারলু এলাকার পুজো একটু অন্যরকম। কারণ এখানে মায়ের আরাধনা হয় গির্জার মধ্যে। আসলে তো সৃষ্টিকর্তা সর্বত্রই বিরাজমান। ওয়াটারলুর পুজোয় অনেকটা সেই ভাবনাই প্রকাশ পাচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াটারলুর ইম্যানুয়াল ইউনাইটেড চার্চে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন এলাকার বাঙালিরা।
ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন, অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলি, তারপর সন্ধিপুজো, বিজয়া দশমীর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান, সবই পালন করা হয় গির্জার মধ্যেই। শুধু তাই নয়, গির্জার ফাদার পুজোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
একত্রিত হয়ে জমিয়ে চলে পেটপুজো। তার সঙ্গে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। এভাবে গির্জার মধ্যে দেবী দুর্গার আরাধনা সচরাচর দেখা যায় না। ওয়াটারলুর এই পুজো শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কানাডা মানে টরন্টোর পুজোর কথা প্রায় সকলেই জানেন।
টরন্টো থেকে কিছুটা সরে এসে ওয়াটারলু এলাকায় একদম পাড়ার পুজোর মতো করে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন রবিন চট্টোপাধ্যায়। শুরুতে পুজো সাধারণ, ছোট পুজো হলেও এখন প্রায় ৪০০ লোকের সমাগম হয়। প্যাকেট সিস্টেমে নয় বরং আয়োজকদের কয়েকজনই হইহই করে রান্নার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
ভোগের মূল আকর্ষণ খিচুড়ি। চার্চের মধ্যে পাত পেড়েভোগ খেতে বসেন সকলে। ইম্যানুয়েল গির্জা তখন পুরোদস্তুর দুর্গাপুজোর মণ্ডপ। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতি বছর প্রতিমা পাঠানো হয় ওয়াটারলুতে। আয়োজকরা বলেন, পুজোর কটা দিন বোঝাই যায় না এটা গির্জা নাকি পুজোবাড়ি। শুধু দুঃখ একটাই, টানা পাঁচদিন ছুটি পাওয়া যায় না, তাই ওই সপ্তাহ শেষে শনি-রবিবারেই হয় দুর্গাপুজো।
কিন্তু তাই বলে আয়োজন, আড়ম্বরে একচুল কমতিও দেখা যায় না। এই বছরের প্রতিমা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। শনি-রবিবার জমিয়ে দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠার পালা। এবার ওয়াটারলুর এই দুর্গাপুজোর অন্যতম মূল উদ্যোক্তা অভিষেক গুহ রায়। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতার সপ্তমী আর অষ্টমীর দিন ওয়াটারলুতেও চলবে উদযাপন। পুজোর সবটুকু পালন করে শেষে থাকবে সিঁদুরখেলা। তারপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দু'দিন ধরে চলবে পেটপুজোও।