কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি : দেশজুড়ে চলছে মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তির স্নান। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি অর্থে সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম মোট ১২টি সংক্রান্ত আছে। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে এই দিনটিকে একটি পুণ্যদিন হিসেবে পালন করা হয়। প্রথা অনুযায়ী এই দিনটিতেই নতুন চাল, গুড়, নারকেল দিয়ে ধানের গোলা পুজো করার রীতি ছিল। এছাড়া, যে কোনও জলাশয়, নদী বা সঙ্গমে স্নান করে সূর্যপ্রণাম করলে মোক্ষযোগ লাভ হলেও হিন্দুদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে।
এদিন ভোররাত থেকে গঙ্গাসাগরে চলছে পুণ্যস্নান। লক্ষ লক্ষ ভক্ত সাগরজলে ডুব দিয়ে মোক্ষ লাভের আশায় পুজো করছেন। কেউ কেউ বৈতরণী পার করে নিচ্ছেন এখনই। সকাল থেকেই কপিল মুনির আশ্রমে দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছে। সাগরে স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে দুপুরের মধ্য ঘরমুখো হতে চান অনেকেই।
গঙ্গাসাগরের পাশাপাশি কলকাতা ও হাওড়ার বাবুঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে চলছে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিট থেকে স্নানের সময় শুরু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে এই পুণ্যস্নানের যোগ। যাঁরা গঙ্গাসাগর যেতে পারেননি, তাঁরা বাবুঘাটের গঙ্গায় সারছেন পুণ্যস্নান। ভোরবেলা থেকে গঙ্গার ঘাটগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। পুণ্যার্থীদের জন্য নিরাপত্তারক্ষায় রয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ, এনডিআরএফের কর্মীরা।
এছাড়া মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গায় স্নান শুরু হয়েছে বহরমপুরেও। রবিবার সকাল থেকেই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাটে গঙ্গানদীতে ভক্তদের ভিড় শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড কুয়াশা, শীত উপেক্ষা করেও পুণ্যলাভের আশায় ভক্তরা স্নান করছেন। অন্যদিকেন প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কেন্দুলির জয়দেব মেলায় প্রতি বছরের মতো এবছরও মকর সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নান চলছে। প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।
বীরভূমের অজয় নদের পাড়ে ছোট্ট গ্রাম কেন্দুলি। মেলা চলবে আগামী তিনদিন। কথিত আছে কবি জয়দেব প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন কাটোয়ার গঙ্গায় পুণ্যস্নানে যেতেন। কোনও একবছর কবি অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাটোয়ায় গঙ্গাস্নানে যেতে পারেননি। দেবী গঙ্গার স্বপ্নাদেশে কবি জয়দেব অজয়ে পুণ্যস্নান সারেন। তারপর থেকেই জয়দেব মেলা হয়ে আসছে তাঁর স্মৃতিতে।