দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ মহাদেব হল সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের বার্তাবাহক। প্রতিবছর চৈত্র মাসে হাজারাধিক ভক্তকুল বড়কাছারি মন্দিরে দেবাদিদেবের মাথায় জল ঢালতে যান। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলের জন্যই দার উন্মুক্ত থাকে এই মন্দিরের। বড়কাছারি কথার অর্থ মূলত বড় কোর্ট। কিছু মানুষজন আবার এই জায়গাটিকে ভূতের কাছারিও বলে থাকেন।
এখানে শিব ভূতনাথ অর্থাৎ ভূত-প্রেতের দেবতা বলে পরিচিত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম তীর্থক্ষেত্র হল বাবা বড়ো কাছারির মন্দির। মসজিদবাটি অঞ্চলের প্রসিদ্ধ দক্ষিণ মোকামবেড়িয়ায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। এখানে একটি বড় অশ্বত্থ গাছের নিচে রয়েছে শিবলিঙ্গ। তাছাড়া এই মন্দিরের একটি বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। যাদের সন্তান হয় না, তাঁরা সন্তান প্রাপ্তির আশায় আসেন এই মন্দিরটিতে। এছাড়াও বহু ণ্যার্থীরা অসুখ, প্রেমে বাধা, জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত মনস্কামনা নিয়ে আসেন এই স্থানে পুজো দিতে। সন্তান লাভের বাসনা পূরণ হলে, পুকুরে স্নান করে গন্ডি কেটে পুজো দেন। ছেলে হলে মাটির গোপাল, আর মেয়ে হলে দিতে হয় একটা মাটির সীতা। মঙ্গল ও শনিবার সব থেকে বেশি ভিড় দেখতে পাওয়া যায় এই মন্দিরে। এছাড়াও এই মন্দিরে নীল পুজোর সময় ও শ্রাবণ মাসে বেশি ভিড় হয়। ভক্তরা তাদের মনের বাসনা কাগজে লিখে মন্দিরটির সামনের রেলিংয়ে লাল দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। এখানের প্রসাদ হল বাতাসা আর চিনির রঙিন খেলনা।
জনশ্রুতি আছে যে নবাব আলীবর্দী খানের শাসনকালের শেষের দিকে মারাঠা বর্গীরা বাংলা আক্রমণ করেছিল। তাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় লোকজন কাছের একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই জঙ্গলটি আদপে ছিল একটি শ্মশান। মারাঠা বর্গীরা এই জঙ্গলে ভুতের ভয়ে প্রবেশ করত না। কিছুদিন পরে এই শ্মশানে আসেন এক সাধু। তিনি তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে, গ্রামের লোকজনদের সমস্যা এবং শারীরিক অসুস্থতা সারিয়ে দেন। এরপর কয়েক বছর পর, মারাঠাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে সাধুর মৃত্যুর পর পর এখানেই তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই তার কবরে থেকে একটি অশ্বত্থ গাছ গজিয়ে ওঠে। সবার বিশ্বাস হয়, সাধু বাবা শিবের অংশ ছিলেন এবং মৃত্যুর পরেও এই অশ্বত্থ গাছের রূপে, তিনি সব গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য ফিরে এসেছেন। এরপর থেকেই এই জায়গাটি ভূতনাথের কাছারি নামে পরিচিত হয়।