কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ব্রিটেনে কি বলেছেন তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিনি প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন| রাহুল গান্ধিকে নিয়ে বিজেপি মহল হইচই হতে শুরু করে দিয়েছে| লোকসভা এবং রাজ্যসভায় রাহুলে গান্ধির বিদেশের মাটিতে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তা দেশের পক্ষে অপমানজনক বলে বিজেপি দল মনে করতে শুরু করে দিয়েছিল| তাঁদের সাংসদ থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা সবাই বলেছেন, রাহুল গান্ধিকে ক্ষমা চাইতে হবে| তিনি বিদেশের মাটিতে ভারত সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছেন| ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন| তিনি বলেছেন সংসদে তাঁর বক্ত্যব পেশ করা সময়ে মাইক বন্ধ করে রাখা হয়| তাঁকে বলতে দেওয়া হয় না| তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত করেন না| সংসদে সবার কথা বলার অধিকার রয়েছে| কিন্তু সেখানে দেখতে পাওয়া গিয়েছে বিরোধী দলের নেতাদের কথাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না| এই সব কথা বলার ফলে রাহুল গান্ধি আজকে বিতর্কে মুখে উপস্থিত হয়েছেন| লোকসভা বা রাজ্যসভায় সবাই সমানভাবে সম্মানিত হয়ে থাকেন| সেখানে সবাইকে কথা বলার সুযোগ করিয়ে দেওয়া হয়| কিন্তু রাহুল গান্ধি বিদেশে গিয়ে দেশের এবং সাংসদের অপমান করেছেন| রাহুল এখন দেশে ফিরেছেন| তিনি বলেছেন, যে তিনি যা বলেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত| তাকে নিয়ে বিজেপি দল এতো হইচই করতে শুরু করে দিয়েছে তার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এবং গৌতম আদানির সুসম্পর্ক এর খবরটাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা| এর জবাব তিনি লোকসভায় দিতে প্রস্তুত| কংগ্রেস দফতরে রাহুল গান্ধিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তার বিরদ্ধে দেশ এবং সাংসদের অপমান করা নিয়ে যে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে তিনি কি ব্যাখ্যা দেবেন| তিনি বিজেপি দলের কছে ক্ষমা চাইবেন? সেই সময়ে রাহুল গান্ধি বলেছেন আমি এই ব্যাপারে কথা বলতে পারতাম| কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল আনিম একজন সাংসদ| আশা করি আমাকে সংসদে এই বিষয়ে কথা বলতে দেওয়া হবে| তিনি বলতে চেয়েছেন যা বলার তিনি সংসদে গিয়ে বলবেন| তার আগে এ ব্যাপারে কারোর কাছে মুখ খুলতে চাইছেন না| সংসদে বলার পর তিনি জনগণের কাছে উপস্থিত হয়ে তা ব্যাখ্য দেবেন| আগে তিনি সংসদে এই বিষয়ে কথা বলতে চান বা তার উত্তর দিতে চান| এই ব্যাপারে কথা বলার সময়ে তিনি কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছেন| তিনি বলেছেন যে আগেই তিনি সাংবাদির বৈঠক করে এর ব্যাখ্য দিতে চান না| তিনি আগে সংসদে উপস্থিত হয়ে সবার সমানে বলবেন তারপরে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়ে এর ব্যাখ্যা দেবেন| এর পরেই রাহুল বলেছেন যে তিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে একজন সাংসদ| সেই কারণে জনগণের কাছে আগে মুখ না খুলে তিনি সংসদে গিয়ে এই ব্যাপারে কথা বলবেন| এতেই অবশ্য রাহুল গান্ধি রক্ষা পাননি| তাঁকে আগ্রমণ করে বিজেপি দলের নেতারা বলতে শুরু করেছেন আর কত তাঁকে শেখানো হবে| না দেখে লিখতে পারেন না| না জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারেন না| এরপরেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ| কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে বলা হয়ছে যে রাহুল গান্ধি সাংবাদিক বৈঠক করে ঠিক কাজই করেছেন| রাহুলের মন্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে| তাঁকে আক্রমণ করে মোদি আদানি সম্পর্ককে অন্য দিকে ঘোরানো চেষ্টা করা হচ্ছে| এটা বিজেপি দলের কৌশল| লোকসভার নির্বাচন আসার আগেই আদানি কেলেঙ্কারীকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাহুলকে বিরোধী করে বিজেপি দল প্রজেক্ট তৈরি করা চেষ্টা করছে| লণ্ডনে গিয়ে রাহুল গান্ধি বলেছেন ভারতীয় গণতন্ত্রে আঘাত আসতে শুরু করেছে| সংসদে আদানি মোদি কথা বলতে গেলে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে দিয়েছে| এর পরে লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, পীযুষ গয়াল, কিরেন রিজজু, প্রহ্লাদ জোশীরা বারবার দাবি করতে শুরু করেছিলেন রাহুল গান্ধিকে ক্ষমা চাইতে হবে| বিজেপি দলের পক্ষ থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদ ঘোষণা করেছেন রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে বিজেপি দল সারা ভারতব্যাপী প্রচার অভিযান করতে শুরু করবে| কিরেন রিজিজু বলেছেন য়ে রাহুল গান্ধি সংসদের উর্ধ্বে নন| তিনি একজন সাংসদ| এইভাবে সংসদের অপমান তিনি করতে পারেন না| রাহুল গান্ধিকে নিয়ে দেশব্যাপী বিজেপি নিন্দা প্রচার অভিযান করতে বলে ঘোষণা দিয়েছে| এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রবীণ নেতা এবং মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন| সেখানে ঠিক হয়েছে রাহুল গান্ধি বিদেশে মন্তব্য করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকবে| দেশে ফিরে রাহুল গান্ধি সংসদে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন| তিনি সংসদে উপস্থিত থেকে বলেছেন তাঁকে বলতে দেওয়ার সময় দেওয়া হোক| তিনি ঘনিষ্ঠ নেতাদের কাছে বলেছেন যে দেশের বিরুদ্ধে তিনি কোনও কথাই বলেননি| এ ব্যাপারে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না| এরপরে তিনি কংগ্রেস দলের নেতা অধীর চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম প্রকাশ বিড়লার সঙ্গে দেখা করেন| তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, সংসদে তঁকে এ ব্যাপারে বলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক| তিনি তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠতে শুরু করে দিয়েছে তার জবাব দিতে চান| এরপরে লোকসভা তুমুল হইচই শুরু হলে লোকসভা সাময়িক মুলতুবি হয়ে যায়| সেই সময়ে রাহুল গান্ধি বলেছেন চারজন মন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন| এর জবাব দেওয়াটা আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে| স্পিকার এ ব্যাপারে কোনও মত প্রকাশ করেননি| তবে রাহুল আশাবাদী য তাঁকে লোকসভায় বলতে দেওয়া হবে| কেন তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভায় অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা নিয়ে বলতে দিয়ে রাহুল মন্তব্য করেছেন যে লোকসভায় মোদি এবং আদানি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছেন| গৌতম আদানির সঙ্গে মোদির সম্পর্কের কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম| কীভাবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া গিয়ে গৌতম আদানির সম্পর্কে ব্যবাসয়িক ওকালতি করেছেন এসেছেন প্রধানমন্ত্রী তা বলতে চেয়েছিলাম| আদানিকে বরাদ পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে রাহুল গান্ধি করতে শুরু করে দিয়েছিলেন| এখন তাঁর মুখ বন্ধ করতে উল্টো দিকে চাপ দিতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি দলের নেতারা| তারা এখন বিদেশে মাটিতে রাহুল গান্ধি কি বলেছেন তা নিয়ে জোরদার প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছেন| রাহুল গান্ধি বলেছেন লোকসভায় তাঁকে বলতে দেওয়ার সুযোগ করিয়ে দেওয়া হোক| তাহলে তিনি এই সব কথার উত্তর দেবেন| যদি তাকে বলতে দওয়া না হয় তাহলে তিনি আদানি এবং মোদির সম্পর্ক নিয়ে সোচ্চার হবেন| কর্নাটক ভোটের আগে বিজেপি সেটা চাইবে না বলে মনে করা হচ্ছে| রাহুল গান্ধি বলেছেন যে তিনি দেশ বা লোকসভার ব্যাপারে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি| যা সত্য তাই বলেছি| একনও বলছি যা সত্য তাকে প্রকাশ করতে কংগ্রেস কেনও সময়ে পিছু পা হবে না| বিজেপি দলের কাছে কংগ্রেস মাথা নত করবে না|
তখন বিরোধী দলের নেতারা সব কোথায় ছিলেন| তাদেরকে দেখতে পাওয় যায়নি| প্রথম তৃণমূল কংগ্রেস আদানি কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল| তারপরে বিরোধী দলের নেতারা আদানি কাণ্ড নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সোচ্চার হতে শুরু করে| আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার বাজারে কারচুপির ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত বা জেসিপি চাইছে না| এদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া সব বিরোধী দলগুলিই আদানি কাণ্ডে জেসিপি চাইছে| সব বিরোধী দলগুলি এখন মনে করতে শুরু করে দিয়েছে যে তাদের গলা টিপে ধরতে সায় শাসক দলের নেতা এবং মন্ত্রীরা| আদানি কাণ্ডকে প্রকাশ করতে দিতে শাসক দল চায় না| তার পরে সংসদে পরিস্থিতি এখন চরমে উঠতে শুরু করে দিয়েছে| সংসদে আদানি কাণ্ডে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেই| তারা এখন বিরোধী সব দলগুলি থেকে দূৰত্ব বজায় রাখতে শুরু করে দিয়েছে| কংগ্রের নেতারা অভিযোগ করতে শুরু করে দিয়েছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি সম্পর্কে নরম সুর ধরতে শুরু করে দিয়েছে| তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তাঁর দল আদানি বিরুদ্ধে প্লাকার্ড নিয়ে সংসদে বিরোধিতায় অংশ গ্রহণ করেছিল| তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নীতির ফারাক রয়েছে| ওরা রা়জ্যে এক আবার জাতীয় স্তরে অন্য নীতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে| রাজ্যে দোস্তি দিল্লিতে কুস্তি করতে চাইছে| কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও আঁতাঁত হয়নি| ২০২১ সালে নির্বাচনে রাজ্যে সিপিএম দলের সঙ্গে কংগ্রেসে আঁতাঁত তৈরি হয়েছিল| কংগ্রেসে সাংসদেরা লাগাতার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে শুরু করে দিয়েছেন| তাহলে কেন আমরা কংগ্রেসে সঙ্গে যাব? কংগ্রেস দলের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে দিয়েছে| তৃণমূল নেত্রী এখন ভয় পেতে শুরু করে দিয়েছেন| তাই অধীরকে সামনে রেখে কংগ্রেসকে নিশানা করতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা| এতে তৃণমূল কংগ্রসের দেউলিয়াপনা রাজনীতির প্রকাশ ভেসে উঠতে শুরু করেছে| এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে অভিযোগ করা হেয়েছ যে একটি সময়ে কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছিলেন সাগরদীঘিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম দলকে এক জোট হয়ে থাকতে হবে| তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, কংগ্রেস নেতারা কেরলে সিপিএম দলের বিরদ্ধে কথা বলছে আবার বাংলা এবং ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করতে বাম দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে| তৃণমূল কংগ্রেসের এই রকম কোনও নীতি নেই| কংগ্রেস সব সময়ে তৃণমূল কংগ্রসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে শুরু করে দিয়েছে| আগে কংগ্রেসকে মনস্থির করতে হবে| কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করে বলেছেন যে ডিজিটাল বয় কি জানেন সাগরদীঘিতে বিজেপি দলের দশ শতাংশ ভোট এসেছে কংগ্রেসের ঝুলিতে| তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে সতেরো শতাংশ ভোট গিয়েছিল|