Life Style News

6 hours ago

Banana leaf benefits:কলাপাতায় খাবার খাওয়া কি শুধু ট্র্যাডিশন? চিকিৎসকরা বলছেন চমকে দেওয়া কিছু উপকারিতা!

traditional Indian food habits
traditional Indian food habits

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :গাছের পাতাকে থালা হিসেবে ব্যবহার করে খাবার পরিবেশন—এই প্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে মোটেই নতুন নয়। একসময় বিয়েবাড়ি বা যেকোনও উৎসবে, যখন হাতে ধরা থালা কিংবা প্লেটের চল এতটা ছিল না, তখন অতিথিদের পাতা পেতে খাওয়ানোই ছিল আদর্শ আতিথেয়তার চিহ্ন। শালপাতা বা কলাপাতায় গরম ভাত, লুচি, ছোলার ডাল কিংবা মাংস-পোলাও পরিবেশন ছিল এক সাধারণ দৃশ্য।

আজও কিছু পরিবেশবান্ধব গ্রামীণ রিসর্টে সেই ঐতিহ্যকে জীবিত রাখার চেষ্টা দেখা যায়। কখনও শালপাতায়, কখনও বা পদ্মপাতা কিংবা কলাপাতায় গরম খাবার পরিবেশন করে গ্রাম্য সংস্কৃতির স্বাদ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও প্রাচীন হল কলাপাতা, যা শুধুমাত্র ঐতিহ্যের প্রতীক নয়, বরং স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবার পরিবেশনের এক অনন্য পন্থাও বটে।

ইতিহাস বিষয়ক নানা গবেষণাজাত তথ্য মানলে কলাপাতার ব্যবহার হচ্ছে খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে। অর্থাৎ আজ থেকে ৪০০০ বছর আগেও মানুষ কলাপাতায় খাবার খেতেন। আর এখনও দক্ষিণ ভারত, পশ্চিমবাংলা-সহ পূর্বভারতের বহু রাজ্যে সেই কলাপাতাতেই খাবার খাওয়ার চল রয়েছে। কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে যায় অনেক কিছুই। কলাপাতা কোনও কারণে টিকে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কলাপাতা নতুন করে ফিরেও আসছে। খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিং কলাপাতা ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে বিদেশ বিভুঁইয়েও।

কেউ কলাপাতা দিয়ে বিশেষ ধরনের কাগজ বানিয়ে প্যাকেজিং করছেন। তাইল্যান্ডের বাজারে আবার কলাপাতাতেই মুড়ে বিক্রি হচ্ছে শাক-সব্জি-ফলমূল। কলাপাতাতে মুড়ে ফাস্ট ফুড বিক্রি করা হচ্ছে মেক্সিকোয়। ফিনল্যান্ডে বহু বছর ধরে এক বিশেষ ধরনের খাবার প্রথা চালু আছে। যেখানে গোটা টেবিলে একটি বড় কলাপাতা পেতে দেওয়া টেবিল ক্লথের মতো করে। তার পরে তার উপরেই সাজিয়ে দেওয়া হয় নানা ধরনের খাবার। টেবিলের চারপাশে ঘিরে বসে সেই কলাপাতার উপরেই মহাভোজ সারেন এক দল মানুষ। এতো নয় সংস্কৃতির কথা। কলকাতার পুষ্টি বিদেরা 

 বলছেন কলাপাতায় খাবার খাওয়ার অনেক উপকারিতাও রয়েছে। এটি যেমন পরিবেশের জন্য ভাল তেমনই স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

কলাপাতায় খাওয়া উপকারী কেন?

প্লাস্টিকে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। বাড়িতে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য আগে যেখানে স্টিল বা কাঁসার বাসনকোসন ব্যবহার করা হত, সেখানে এখন প্লাস্টিকের থালা-বাটি-গ্লাস-বোতল ব্যবহার হচ্ছে। এক বার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে সিন্থেটিক পাত্র। পুষ্টি বিদেরা বলছেন, তার বদলে কলাপাতার ব্যবহারে অনেক নিরাপদ। কারণ—

১। কলাপাতায় খাবার খেলে শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক যাওয়ার ঝুঁকি তো থাকছেই না, থাকছে না রাসায়নিক বিক্রিয়ার আশঙ্কাও। ফলে কলাপাতা ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং প্লাস্টিক বা সিন্থেটিক পাত্রে খাওয়ার থেকে উপকারী।

২। কলাপাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অর্থাৎ জীবাণুরোধক উপাদান। যা খাবারে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত হতে দেয় না।

৩। গরম খাবার কলাপাতায় পরিবেশন করা হলে কলাপাতার সুগন্ধ খাবারের সঙ্গে মিলেমিশে একটা সুন্দর গন্ধ তৈরি করে যা খেতে ভাল লাগে।

৪। কলাপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ক্লোরোফিল। পুষ্টিবিদ বলছেন, অনেকেই মনে করেন, কলাপাতায় গরম খাবার পরিবেশন করা হলে সেই সব গুণ খাবারেও মিশতে পারে। যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য ভারতের প্রাচীনতম চিকিৎসা শাস্ত্র আয়ুর্বেদে এর গুণের কথা বলা আছে।

৫। পুষ্টিবিদ বলছেন, কলাপাতায় খাবার খেলে নিজের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গেও জুড়ে থাকা যায়। মাটির টান অনুভব করা যায়। যা আর কিছু না হোক মন ভাল করতে বাধ্য।

৬। তা ছাড়া কলাপাতা সহজলভ্যও। গ্রামে, শহরতলিতে এটি বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। শহরেও খুব বেশি দাম দিতে হয় না। তাই এটি ব্যবহারে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে পুষ্টিবিদের পরামর্শ। কলাপাতা ব্যবহার করার আগে সব সময় ভাল ভাবে ধুয়ে নিন।


You might also like!