কলকাতা, ১৮ আগস্ট : বাবার পাপে মেয়ে শাস্তি পাচ্ছেন বলে বুধবারই মন্তব্য করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছতে তার আঁচ পেলেন গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। আদালত চত্বরে তাঁকে লক্ষ্য করে উড়ে এল ‘গরুচোরের মেয়ে’ কটাক্ষ। অনুব্রত কন্যাকে দেখে ক্ষোভ উগরে দিলেন এক নাগরিক।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে, কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছন সুকন্যা। তাঁকে দেখে ভিড় উপচে পড়ে আদালত চত্বরে। তার মধ্যে দিয়ে পুলিশি ঘেরাটোপে আদালতে ঢোকেন সুকন্যা। সেই সময়ই তাঁকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে একের পর এক কটাক্ষ।
পেশায় প্রাথমিক শিক্ষিকা সুকন্যা টেট উত্তীর্ণ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই নথি জমা দিতেই আদালতে সুকন্যা। আর সেখানেই কটাক্ষ শুনতে হল তাঁকে। চিনার পার্কের বাড়ি থেকে এ দিন আদালতে পৌঁছন সুকন্যা। সেখানে তাঁকে ঘিরে ধরে সংবাদমাধ্যম। তিনি আদৌ টেট উত্তীর্ণ কিনা জানতে চাওয়া হয়। কিছু বলতে চান কিনা, জানতে চায় সংবাদমাধ্যম। কিন্তু কোনও মন্তব্য করেননি সুকন্যা। ভিড় কাটিয়ে সটান আদালতে ঢুকে যান তিনি। আর তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে কটাক্ষ উড়ে আসে।
সুকন্যার নীরব কেন প্রশ্ন করলে, পাশ থেকে এক মালতী মিত্র নামের মহিলাকে উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘কিছু বলতে পারবে না। বলার মতো মুখ নেই। কী করেছে জানেন না! জানেন না কী অন্যায় করেছে!’’ তার মধ্যেও নীরবেই এগোতে থাকেন সুকন্যা। মুখে ছিল মাস্ক। তাতে মালতী বলেন, ‘‘মুখটা দেখান, একটা ছবি তুলি!’’
এরপর সরাসরি অনুব্রতকে নিয়ে সুকন্যাকে বিঁধতে শুরু করেন মালতী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাবা গরু চোর, তাঁর মেয়ে। এঁদের এত গার্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন!’’ কেন সুকন্যাকে আক্রমণ করছে জানতে চাইলে মালতী বলেন, ‘‘বাবার কুকীর্তি জানেন না! বাবা কী করেছে! একটা এইট পাস লোক। মাছের ব্যবসায়ী ছিল। কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। সমস্ত টাকার হিসেব দিতে পারবেন! আমরা গরিব মানুষ না খেয়ে মরছি।’’
নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বুকে আন্দোলন করছেন টেট উত্তীর্ণরা। তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যও কি পাস করে চাকরি পাননি! জানতে চাওয়া হয়, মালতীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির কেউ পরীক্ষা দেয়নি। তৈরি করব কী করে? তৈরি করব, আর তার পর রাস্তায় পড়ে থাকবে ছ’মাস, ন’মাস ধরে। কেউ বিচার করবে না! এদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা ন্যায় চাই।’’ উত্তেজিত মালতী বলেন, ‘‘গরু চোর, গরু চোর, গরু চোর,গরু চোর। একশো বার বলব গরু চোর। মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। জজসাহেবরা বোকা নন। কই আমাকে আপনাকে তো ডাকছে না! আদালত আছে বলে বেঁচে রয়েছি আমরা।’’