দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- বাংলাদেশ থেকে আরও রোহিঙ্গা নেবে অস্ট্রেলিয়া, জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত)। ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করতে গিয়ে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক দেশের প্রতিনিধিদল এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে আমরা রোহিঙ্গাদের অস্ট্রেলিয়ায় নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছি। তারা আগেও দু হাজার রোহিঙ্গা নিয়েছে, আরও নেবে। এ ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সম্মতি জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবৈধভাবে যে ৯৭ জন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছে এবং যাদের বৈধ ভিসা ছিল না, তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা দেশে ফেরত নিয়ে আসব। তিনি আরও বলেন, তারা অস্ট্রেলিয়ার প্রবেশ করতে পারেনি, পাশে একটা দ্বীপে তাদের রাখা হয়েছে। তবে তাদের খাওয়া-দাওয়ার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুদেশের জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা, সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি এবং মেরিটাইম সেফটি বিষয়ে সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধ বিষয়ে সহযোগিতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুদেশের পুরনো বন্ধুত্ব কমনওয়েলথ ঐতিহ্য এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হয়েছে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলির মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক উইলিয়াম ওডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি নাগরিক যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পুরস্কার বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা আরও জানান, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার সহ আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকি প্রতিরোধে বাংলাদেশ সর্বদা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা জোরদার ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টি ও আগ্রহ রয়েছে।
এ সময় অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়া সহ অনেক দেশ নানা ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম অনলাইন ও বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াও সাইবার হামলা সহ এ সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
বৈঠকে বাংলাদেশে ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ‘সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি অ্যান্ড মেরিটাইম সেফটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড-এর মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মির এরশাদ আলি এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান মেরিটিটাইম বর্ডার কমান্ড-এর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ব্রেট সন্টার।