Health

1 year ago

International Blood Donation Day:আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস - একটি প্রতিবেদন

Blood Donation
Blood Donation

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ আজ ১৪ জুন। ইতিহাসের স্মরণীয় একটি দিন। এই ১৪ জুন জন্ম দিয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম  নোবেল বিজয়ী জীববিজ্ঞানী ও চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন জত্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি ১৯০০ সালে ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কার করেন। তার এ আবিষ্কার উন্মোচন করে দিয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক বিশাল অধ্যায়। জন্মদিনে তাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ জুন উদযাপন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। প্রতিবছরই এ দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে, যেমন- ‘রক্তের গ্রুপ জেনে নিন, জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন’, 

রক্ত আমাদের সংযুক্ত করে’, ‘প্রত্যেক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা একেকজন হিরো’, ‘রক্ত দিন! বাঁচান একটি প্রাণ!’ ইত্যাদি।

বিজ্ঞানের চূড়ান্ত অগ্রগতির দিনেও বিজ্ঞান কিন্তু রক্তের কোনো উৎস আবিষ্কার করতে পারেন নি। রক্তের একমাত্র সোর্স মানব দেহ। রক্তের বিকল্প শুধু রক্তই। মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় এ উপাদানটি কলকারখানায় তৈরি হয় না। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে আজ পর্যন্ত রক্তের কোনো বিকল্প আবিষ্কার হয়নি। রক্তের অভাবে যখন কোনো মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তখন অন্য একজন মানুষের দান করা রক্তই তার জীবন বাঁচাতে পারে। তাই এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কী হতে পারে! মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন-অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, রক্তবমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে, দুর্ঘটনায় আহত রোগী, অস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসবকালে, ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল রোগে, এনিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গি হিমোরেজিক ফিভার ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। 

রক্ত তারাই দিতে পারেন যারা ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। যে কোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি, যার শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা চার মাস পরপর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্ত দিতে হলে কিছু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে কমপক্ষে পাঁচটি রক্তবাহিত রোগের অনুপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। এ রোগগুলো হলো-হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি বা এইডসের ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। রোগের স্ক্রিনিং করার পর এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকলেই সেই রক্ত রোগীর শরীরে দেওয়া যাবে। 

 রক্তদানের অনেক উপকার আছে। যেমন -

  ১) . রক্তদানে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে যায়। ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তদাতা সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকেন।

  ২) . শরীরে রক্তকণিকা তৈরির কারখানা হলো অস্থিমজ্জা। নিয়মিত রক্তদান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরি হয়, ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। এতে যে কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।

  ৩) রক্তদানের সময় রক্তে নানা জীবাণুর উপস্থিতি আছে কিনা তার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ফলে রক্তদাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কিনা।

  ৪) অনেক সময় রক্তদাতার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

  ৫) রক্ত দেওয়ার সময় রক্তের গ্রুপিং করা হয়। ফলে রক্তদাতা তার রক্তের গ্রুপ জানতে পারেন।

  ৬) সাধারণত যে সংস্থার কাছে রক্ত দেওয়া হয়, তারা একটি ‘ডোনার কার্ড’ তৈরি করে দেয়। এ কার্ডের মাধ্যমে একবার রক্ত দিয়েই রক্তদাতা আজীবন নিজের প্রয়োজনে ওই সংস্থা থেকে রক্ত পেতে পারেন। 

 ইত্যাদি নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায় রক্তদানের মাধ্যমে। তাই নিজের ক্ষতি যদি না হয়, বরং লাভই হয়, আর অন্য একজন মানুষের জীবনও বাঁচে, তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসব না কেন? আমরা সমাজে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক আদান-প্রদান আর সহায়তা সমাজবদ্ধ জীবনের অন্যতম পূর্বশর্ত। আর স্বেচ্ছায় রক্তদান এ সেবাপরায়ণতার অনুপম উদাহরণ।



You might also like!