দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: নাইট শিফটে কাজ করা মহিলা কর্মীদের সুরক্ষায় এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। নাইট শিফটে কাজ করা মহিলাদের জন্য বিশেষ গাইডলাইন আনতে ইতিমধ্যেই একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। সেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ২২টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। এই নির্দেশিকা মূলত তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাত্রিকালীন শিফটে যুক্ত সংস্থাগুলির জন্য প্রযোজ্য হবে। গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাতের ডিউটি মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যদি কেউ স্বেচ্ছায় নাইট শিফটে কাজ করতে চান, তাহলে সংস্থাকে তাঁর লিখিত অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি সংস্থার তরফে অফিস এবং যাতায়াত—দুই ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে অফিস কর্তৃপক্ষের তরফে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নাইট শিফটের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। একসঙ্গে অন্তত ১০ জন মহিলা বা মোট কর্মীর তিন ভাগের এক ভাগ মহিলা কর্মী থাকতে হবে সেই শিফটে। সংস্থাকে মহিলা কর্মীদের যাতায়াতের জন্য GPS ট্র্যাকিংযুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে থাকতে হবে প্রশিক্ষিত মহিলা নিরাপত্তারক্ষী এবং জরুরি অ্যালার্ট সিস্টেম। এছাড়াও অফিসের ভিতরে রাখতে হবে বিশ্রামের জায়গা, ক্যান্টিন, অ্যাম্বুল্যান্স এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। অফিসে ঢোকার ও বেরোনোর পথে এবং করিডরে নজরদারির ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। গঠন করতে হবে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণ কমিটি, যেখানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করতে হবে।
শুধু তাই নয়, নবান্নের এক কর্তা জানান, ওয়ার্কপ্লেস সেফটির জন্য জরুরি নম্বর অফিসের এমন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যা সকলের নজরে আসবে। তাঁদের সেফটি পলিসি স্থানীয় ভাষায় সবাইকে বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হবে সংস্থার কর্তাদের। একই সঙ্গে যে সমস্ত সংস্থায় এই মহিলা কর্মীরা নাইট শিফটে কাজ করবেন, তাঁদেরও কড়া স্ক্যানারে রাখা হবে। খসড়ায় রয়েছে, প্রত্যেক সংস্থায় ইন্টারনাল সেফটি রিভিউ কমিটি থাকবে। তার সদস্যরা তিন মাস অন্তর বৈঠকে বসবেন, এবং দেখবেন সব ঠিকঠাক চলছে কিনা! যদি না করা হয়, তাহলে ওই সংস্থাকে জরিমানা করা হবে শ্রম আইন মোতাবেক। এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই সংস্থার ছাড়পত্র বাতিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, আর জি কর হাসপাতালের নার্সের উপর হওয়া নির্যাতনের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন নাইট শিফটে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নির্দেশিকা আনবে সরকার। এবার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে উদ্যোগী হল নবান্ন। এই গাইডলাইন কার্যকর হলে নাইট শিফটে কর্মরত হাজার হাজার মহিলা কর্মী আরও বেশি সুরক্ষা এবং সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারবেন বলেই আশা প্রশাসনের।