দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ জগন্নাথ অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ঈশ্বর। জগন্নাথ স্বরূপে আসলে বিষ্ণুর পুজো করা হয়। আষাঢ় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। এ দিন জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা রথে করে নগর ভ্রমণে বের হন। পুরীর রথযাত্রা বিশ্ব বিখ্যাত। তবে পুরী ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। স্কন্দ পুরাণ, নারদ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ ও ব্রহ্ম পুরাণে রথযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। এ বছর কবে পালিত হবে রথযাত্রা, কেন এই উৎসব পালিত হয়, সে সংক্রান্ত নানান তথ্য বিস্তারিত জানানো হবে।
কবে রথযাত্রা?
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথির সূচনা হবে ৭ জুলাই সকাল ৪টে ২৬ মিনিটে। এই তিথি সমাপ্ত হবে ৮ জুলাই সকাল ৪টে ৫৯ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুযায়ী ৭ জুলাই রথযাত্রা পালিত হবে।
কেন পালিত হয় রথযাত্রা
রথযাত্রা পালন সম্পর্কে নানান কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
এক কাহিনি অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথকে স্নান করানো হয়। তার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পর প্রায় ১৫ দিন জগন্নাথকে একান্তবাসে রেখে তাঁর সেবা-শুশ্রূষা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলা হয়। আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ সুস্থ হয়ে একান্তবাস সমাপ্ত করেন এবং সকলকে দর্শন দেন। জগন্নাথের দেখা পেয়ে সকলে আনন্দিত হয়ে রথযাত্রার আয়োজন করেন।
অন্য এক পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সুভদ্রা দ্বারকা দর্শনের ইচ্ছা প্রকট করলে কৃষ্ণ ও বলরাম পৃথক পৃথক রথে বসে নগর ভ্রমণে বের হন। মনে করা হয়, এর পর থেকেই প্রতি বছর রথ যাত্রা আয়োজিত হয়।
আর এক প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ইহলোক ত্যাগের পর কৃষ্ণের সঙ্গে বলরাম ও সুভদ্রার পার্থিব শরীর সমুদ্র তীরে দাহ সংস্কার করা হয়। সে সময় সমুদ্রতীরে ঝড়ের বেগে দ্বারকাধীশের অর্ধদগ্ধ শব সমুদ্রে প্রবাহিত হয়ে পুরী পৌঁছয়। পুরীর রাজা সেই তিন শব তুলে পৃথক পৃথক রথে বিরাজমান করান। নগরের লোকেরা নিজে সেই রথ টেনে সারা নগর ঘোরান। দারু কাঠ শবের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে এসেছিল সেই কাঠ দিয়ে বাক্স তৈরি করে তাতে শব রেখে ভূমিতে সমর্পিত করে দেওয়া হয়। চারণ পুস্তক অনুযায়ী এর পর থেকেই প্রতি বছর রথযাত্রা পালিত হতে শুরু হয়।
জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার পৃথক রথ
শাস্ত্র মতে নীম কাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথের নির্মাণ করা হয়। বসন্ত পঞ্চমী তিথি থেকেই রথের উপযুক্ত কাঠ নির্বাচন শুরু হয়। রথ নির্মাণে পেরেক, কাঁটা বা অন্য কোনও ধাতু ব্যবহার করা হয় না। যে তিনটি রথে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা নগরযাত্রায় বের হন, তাদের প্রতিটির পৃথক নাম ও বিশেষত্ব রয়েছে।
জগন্নাথ
জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ, ১৬ চাকার এই রথ ৪৫ ফুট উঁচু এবং লাল ও হলুদ রঙের হয়। এই রথের পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহন, এর রক্ষক গরুড়, সারথী দারুকা। যে রশি দিয়ে জগন্নাথের রথ টানা হয় তার নাম শঙ্খচূড়া।
বলভদ্র
বলরাম বা বলভদ্রের রথ তালধ্বজ নামে পরিচিত। ১৪ চাকা বিশিষ্ট ৪৩ ফুট উঁচু এই রথ লাল, নীল ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে। তালধ্বজের চূড়ায় যে পতাকা শোভা পায়, তার নাম উনানি। এই রথের রক্ষক বাসুদেব, সারথী মাতালি, দড়ির নাম স্বর্ণচূড়া।
সুভদ্রা
শাস্ত্র মতে সুভদ্রার ১২ চাকার ৪২ ফুট উঁচু রথের নাম দেবদলন। লাল ও কালো এই রথের পতাকার নাম নন্দ্বিক। এই রথের রক্ষক জয়দুর্গা, সারথী অর্জুন ও রশির নাম স্বর্ণচূড়া।