দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবাসে শারদোৎসব মানেই ভিন্ন এক আবেগ, ভিন্ন এক রঙের ছোঁয়া। গ্রামবাংলার কাশফুলে ভরা মাঠ কিংবা তুলোর মতো সাদা মেঘে ঢেকে থাকা আকাশ হয়তো সেখানে মেলে না, তবু উমার আগমনের সুর বেজে ওঠে ভুবনজুড়ে। কলকাতা থেকে ক্রাইস্টচার্চ—অদৃশ্য উৎসবসুতোয় গেঁথে এক হয়ে যান বিশ্বের প্রতিটি বাঙালি। দুর্গাপুজোর সেই রূপ, রং, ঐতিহ্য এবং ধারাবাহিকতাকেই ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে ‘ইনট্যানজিবেল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর মর্যাদা দিয়ে। এবছর সেই আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতে ক্রাইস্টচার্চের দুর্গাপুজোয় উপস্থিত থাকছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন ও তাঁর স্ত্রী আমান্ডা। ইতিমধ্যেই পুজোর প্রস্তুতি ঘিরে ক্রাইস্টচার্চের বাঙালিদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন তিনি।
কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘কে তোমার কথা শোনে?/ তুমিই-বা শোনো কার কথা?/ তোমার আমার মধ্যে দু-মহাদেশের নীরবতা।’ ভারত আর নিউজিল্যান্ড – দু’মহাদেশের দুই দেশের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব ঢের, কিন্তু প্রাণের টানে তা অতি নিকট। সেই নিকট সম্পর্কের সূত্রপাত অবশ্য সেই ১৮২৬ সাল থেকে। দু’শো বছর ছুঁইছুঁই সেই সম্পর্ক। এ কী কম কথা? তা তো নয়। আর শুধু এই সম্পর্কই বা কেন? ঈশ্বরের উপাসনাতেও মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে দুই দেশ। এবছর শারদীয়া আগমনের আর বেশি সময় নেই। প্রবাসে এত তাড়াতাড়ি অবশ্য শারদ আমেজ আসে না। তবু বাঙালি মনকে বেঁধে রাখা দায়। ‘ক্রাইস্টচার্চ বেঙ্গলি কমিউনিটি’ তাই এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
আর এবছর তো তাদের আনন্দ বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। নিউজিল্যান্ডের খোদ প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এই পুজোয় অংশ নিতে আগ্রহী। ইতিমধ্যে তিনি বাঙালিদের সঙ্গে কথাবার্তা সেরেছেন। পারস্পরিক সংস্কৃতি আদানপ্রদানের কথা বলেছেন। বাঙালির সেরা উৎসব নিউজিল্যান্ডে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও তো এনে দেয়। ভারতীয় ঐতিহ্য আর হিন্দু দর্শনের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ দেখে এবছর শারদোৎসবের সূচনায় সস্ত্রীক আমন্ত্রণ করেছে পুজোর আয়োজকরা। সংস্থার তরফে অর্পণ মণ্ডল জানান, প্রধানমন্ত্রী লুক্সনকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকবির অবিস্মরণীয় রচনা – গীতাঞ্জলি। দেওয়া হয়েছে বিশেষ নকশার একটি ছাতা, যা কলকাতার বিখ্যাত মহেন্দ্র দত্ত অ্যান্ড সনসের তৈরি। এছাড়া বাংলার রন্ধনজাদুর সঙ্গে পরিচয় করাতে নানারকমের মিষ্টান্ন ছিল, যা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চের বাঙালি সম্প্রদায়ের তরফে অমরজিৎ সরকার বলছেন, ”২০২১ সালে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। আর তারপর থেকে শুধু বিশ্বের বাঙালিরা নন, রাষ্ট্রনেতারাও পুজো নিয়ে আগ্রহী। এখানে (নিউজিল্যান্ড) আমাদের পুজো নিয়ে উপ প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের উৎসাহই প্রমাণ করে যে তাঁরা আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি বেশি করে শ্রদ্ধাশীল, যা দু’দেশের সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।” আসলে এটাই বোধহয় উৎসবের মহিমা!