দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সকালের সোনালি রোদে ঝলমল করছে চারদিক, উলুবেড়িয়ার নোনা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি থেকে ভেসে আসছে শিউলির মিষ্টি সুবাস। সিংহদরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই কানে বাজে গম্ভীর সুরে উচ্চারিত মন্ত্র— “যা দেবী সর্বভূতেষু...”তখন ইংরেজ আমল। মা কালীর সামনে ব্রিটিশ বধের শপথ নিচ্ছেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ঠিক সেই সময়ে যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হয় দুর্গাপুজো। ভক্তি আর নিষ্ঠা, এই বাড়ির পুজোর মূল সুর।
জন্মাষ্টমীর পর থেকেই কাঠামো বাঁধার কাজ শুরু হয়ে যায়। আগে বাড়ির লোকজনই মাতৃমূর্তি তৈরি করতেন। এখন অবশ্য আর সেই রীতি নেই। মৃৎশিল্পীদের ডেকে আনা হয়। তাঁদের হাতেই রূপ পান মা।
ষষ্ঠীতে বেলতলায় অধিবাস। সেই দিন থেকেই শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। এই পুজোর বিশেষত্ব হলো ভোগ। সপ্তমীতে খিচুড়ি ভোগ, অষ্টমীতে লুচি, নবমীতে ভাতের সঙ্গে নবরত্ন। আর দশমীতে পান্তাভাতের সঙ্গে পোড়া ভোগ নিবেদন করা হয়। পোড়া মানে সব কিছুই পোড়াষ আলু পোড়া, বেগুন পোড়া, পটল পোড়া। যত রকমের পোড়া সবজি হয় আর কী!
দশমীর দুপুরে শুরু হয় কাদাখেলা। এ এক অন্য রকমের রীতি। বাড়ির সামনে মাটিতে জল ঢেলে কাদা তৈরি করা হয়। তার পরে বাড়ির সবাই মিলে কাদা মাখেন। একে অন্যকে মাখিয়ে দেন। ছোটরা থামতেই চায় না। কাদা কমে গেলে ফের জল ঢালা হয়। ফের চলে কাদাখেলা। তার পরে মিষ্টিমুখ।
তবে বিসর্জন হয় না। হ্যাঁ। মা’কে আবার বিসর্জন দেওয়া যায় নাকি। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতেই সারাবছর প্রতিমা থাকে। নিত্যপুজোও হয়। পরের বছর ফের প্রতিমা তৈরি। তার পরে আগের বছরের বিসর্জন। বন্দ্যোপাধ্য়ায় বাড়িতে তাই সারাবছরই দুর্গাপুজোর সুর। সেই সুরে কাছে দূরে বাজায় বাঁশি....।