প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান হনুমানজির আরাধনা করা হয়.। এই পুণ্যদিনে সংকটমোচন বজরঙ্গবলী প্রভু হনুমানজির পূজা আরাধনা প্রার্থনা করা হয়। দিনটি হনুমান জন্মোৎসব হিসেবেও পালিত হয়। হিন্দু ধর্মীয় পরিসরে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য।
ভগবান হনুমান হলেন রামায়ণের অন্যতম গুরুত্পূর্ণ চরিত্র। ভগবান হনুমানের সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
১) সংস্কৃত ভাষায় শ্রী হনুমানের ১০৮ টি নাম আছে।
২) শ্রী হনুমান ব্রহ্মচারী ছিলেন, তিনি বিবাহ কখনও করেননি। তবে তার এক পুত্র সন্তান ছিল। তাঁর নাম ছিল মকরধ্বজ । রাবণ লঙ্কায় অগ্নিকাণ্ডের পরে লেজের আগুন নেভাতে যখন বীর হনুমান তাঁর লেজ সমুদ্রের জলে চুবিয়েছিলেন।
তখন তার এক ফোঁটা ঘাম থেকে জন্ম হয় মকরধ্বজের।এরপর থেকেই মকরধ্বজ হনুমানকে নিজের পিতা ভাবেন।
৩)শ্রী হনুমান পিতার নাম কেশরী এবং অঞ্জনা মাতার নাম । অঞ্জনা দেবী ছিলেন ভগবান শিবের ভক্ত। এছাড়াও তাকে পবন পুত্রও বলা হয়।
৪) ভক্তি আর শক্তির অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভগবান হনুমানকে। হনুমান হলেন শিবের একাদশ তম অবতার।
৫) ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে নারদ মুনির হনুমানকে বধ করতে গিয়েছিলেন শ্রীরাম।তখনই ঠিক হনুমান একমনে রাম নাম জপ করতে থাকেন আর সেই রাম নামেই কুজো হয়ে যায় এই ব্রহ্মাস্ত্র সবচেয়ে শক্তিশালী
৬) সীতা দেবী একবার শ্রী হনুমানকে উপহার হিসাবে একটি মুক্তোর মালা দিয়েছিলেন । তখন হনুমান তা বিনীতভাবে ফেরত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন প্রভু তার রামের নাম ছাড়া কোনও কিছুই গ্রহণ করেন না সে। তার এই কথা প্রমাণ করার জন্য সে তাঁর বুক চিরে ফেলেছিল।
৭) বীর হনুমান শ্রী রামের একনিষ্ঠ ভক্ত। যদি তাকে মুগ্ধ করতে চান তবে শ্রীরামের উপাসনা আগে করতে হবে।
৮) হনুমানের মুখ পাঁচটি । বীর হনুমান তার এই পঞ্চমুখের পিছনে আছে এক আকর্ষণীয় গল্প।
রামের বিরুদ্ধে জয়ী হতে যুদ্ধে তাঁর রাবণ সাহায্য চানশাসক মহীরাবণ পাতালের ও অভিরাবণের।
বিভীষণের রাবণ রূপ ধারণ করে এবং রাম-লক্ষ্মণকে অপহরণ করে নিয়ে পাতালে যান।
হনুমান খুজতে খুজতে তাকে পাতালে প্রবেশ করেন। প্রবেশ মকরধ্বজকে পথে দেখে হনুমান নিজের পরিচয় দেন, মকরধ্বজ এরপর পথ ছেড়ে দেন ।
পাতালে প্রবেশ করার পর দেখেন মহীরাবণ এবং অভিরাবণকে যদি বিনাশ করতে হয় তবে পাঁচটি দ্বীপ নেভাতে হবে।
দ্বীপের মুখ পাঁচদিকে অবস্থান করায় তা নেভাতে শ্রী হনুমানও পাঁচটি মুখ ধারণ করলেন।
এরপর তিনি পাঁচটি দীপ নিভিয়ে মহীরাবণের
বিনাশ করে রাম-লক্ষ্মণকে উদ্ধার করেন।
৯) শ্রী হনুমানের এই পঞ্চমুখের স্বতন্ত্র নাম হল- হনুমান, হয়গ্রীব, নরসিংহ, গরুড় এবং বরাহ। আবার তার এই পঞ্চমুখকে প্রার্থনার পাঁচটি রূপ- নমন, স্মরণ, কীর্তন, যাচন এবং অর্পণ বলেও মনে করেন অনেকে।
১০) শ্রী হনুমানের লঙ্কাকাণ্ডও আসলে ছিল একটি অভিশাপ যেটি বহুদিন আগে রাবণকে শিবের সেবক নন্দী দিয়েছিলেন।
শুভ মুহূর্ত কখন-কখন?
সকাল ৬টা ৬ মিনিটে থেকে সকাল ৭টা ৪০ মিনিট
বেলা ১০টা ৪৯ মিনিট থেকে দুপুর ১২ টা ২৩ মিনিট
দুপুর ১২টা ২৩ মিনিট থেকে দুপুর ১টা ৫৮ মিনিট
দুপুর ১টা ৫৮ মিনিট থেকে বিকেল ৩টে ৩২ মিনিট
বিকেল ৫টা ০৭ মিনিট থেকে সন্ধে ৬টা ৪১ মিনিট
সন্ধে ৬টা ৪১ মিনিট থেকে রাত ৮টা ০৭ মিনিট।
হনুমান জয়ন্তীর তাৎপর্য কী জানেন?
হনুমানজিকে শিবের অবতার ধরা হয়। হনুমানের জন্মই হয়েছিল রামকে সহায়তা করার জন্য। হিন্দু বিশ্বাস, হনুমান আজও বেঁচে আছেন এবং এই পৃথিবীতেই আছেন, কেননা তিনি অমর। তাঁর অষ্ট সিদ্ধি ও নব নিধি ছিল। তাঁর কাছে অসম্ভব কিছু ছিল না। হনুমানজি তাঁর ভক্তকে বিপুল সাফল্যের আশীর্বাদ করেন ও সুখে পূর্ণ করে তোলেন তাঁদের।