Editorial

9 months ago

Barun Sengupta: প্রিন্ট মিডিয়া ও বরুন সেনগুপ্ত

Barun Sengupta (File Picture)
Barun Sengupta (File Picture)

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ তিনি অনন্য, তিনি গ্ল্যামারাস, তিনি সাংবাদিকদের মহানায়ক , দীর্ঘদেহী, সুদর্শন, সুভদ্র, সদালাপী, রাজ্য-রাজনীতি সংক্রান্ত অজানা সব তথ্যের সন্ধানী তিনি বরুন সেনগুপ্ত। প্রিন্ট মিডিয়ার অন্যত্তম নাম সাংবাদিক বরুন সেনগুপ্ত। তাঁর কাজ বাকিদের অনুপ্রেরনা জুগিয়েছে বরাবর। তিনি যে সকলের মধ্যে থেকে ও যে আলাদা তা বুঝিয়ে দিতেন তার কাজের মাধ্যেমে। আনন্দবাজার পত্রিকায় যেদিন বরুণ সেনগুপ্তর কলাম বেরুত, শুনেছি সেদিন নাকি কাগজের বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে যেত! তার লেখার ভাষা ছিল অতি সহজ সরল, ফলত তার এই লেখার ধরন খুব সহজেই পৌঁছে যেত সাধারন মানুষেরর কাছে।  

শুনেছি, একবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে বরুণ সেনগুপ্তকে দেখার জন্য উপচে পড়া ভিড় আমারই নিজের চোখে দেখা। সেদিনকার অনুষ্ঠানে তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিষয়ে বক্তৃতা দেবেন। ভিড়ে হল প্রায় উপচে পড়ছে। দর্শকের মধ্যে অবশ্য মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। প্রথম বক্তা বরুণ সেনগুপ্ত। মঞ্চে উঠতেই মেয়েরা করতালি দিয়ে উঠল আর ওঁর বক্তৃতা শেষ হতেই ইন্সটিটিউট হল ফাঁকা। 

শুনেছি এমনিতে হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ হলেও যেদিন মাথায় কোনও বিশেষ খবর নিয়ে ভাবনা থাকত, সেদিন একেবারে অন্য মানুষ। মুখে কথা নেই। প্রেস কর্নারের একদিকে বসে নোটবুক খুলে কিছু একটা লিখছেন বা আঁকিবুকি কাটছেন। আবার হাতে যেদিন কাজ কম, সেদিন আবার অন্য মানুষ তিনি, কখনও হাসিঠাট্টা করছেন, কখনও বা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।মনমেজাজ ভাল থাকলে সহকর্মীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করতেন বরুণবাবু। বড় ছোট কেউ বাদ যেতেন না।তবে আড্ডার বিষয় হত কেবল ই খবর।   কেবল সাংবাদিকতা নয় তাঁর নসা ছিল ছবি তোলর ও।  

শংকর ঘোষ তাঁর ‘খবরের অন্তরালে খবর’ গ্রন্থের লেখা থেকে জানতে পারি ,ষাটের দশকে বরুণ সেনগুপ্ত ও শংকর ঘোষের মধ্যে এক অসম বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয়। যুক্তফ্রন্টের সময় প্রায় রোজই নতুন নতুন খবর। প্রেস কর্নারে বহু রিপোর্টারদের মধ্যে শংকর ঘোষ ও বরুণ সেনগুপ্ত ছিল স্বপ্রতিভ। দু’জনের মধ্যে যে শুধু বয়সের ফারাক ছিল তাই নয়, রাজনৈতিক মতামত, কাজের ধরন ইত্যাদি নিয়ে ওঁদের মধ্যে কিন্তু মিলের থেকে অমিল ছিল বেশি। অথচ সব ছাপিয়ে এই অনুজ সাংবাদিকটির সঙ্গে শংকরের ছিল এক আন্তরিক সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক। কাজের ব্যাপারে একটা আস্থা ছিল পরস্পরের প্রতি। প্রায় রোজই দিনের খবর নিয়ে আলোচনা হত দু’জনের মধ্যে। প্রয়োজন হলে দু’জনে একসঙ্গে একই সংবাদসূত্রের কাছে যেতেন।  

তখন ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকাল। দূরদর্শনের কোনও একটা রাজনৈতিক পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে শংকর ঘোষ, বরুণ সেনগুপ্ত এবং আরও এক সাংবাদিক আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আলোচনা চলাকালীন শংকর ঘোষ এবং বরুণ সেনগুপ্ত দু’জনেই কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু কার্যকলাপের কড়া সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠানটি যেদিন প্রচারিত হল, দেখা গেল ওঁদের দু’জনের সেই বিরুদ্ধ আলোচনার অংশটি পুরো ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় দু’জনে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন। বরুণবাবু স্থির করেছিলেন যে আর কোনওদিন তিনি দূরদর্শনের কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন না।

জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বারবার কলম ধরেছেন বরুণবাবু। তারই জেরে তিনি নয়াদিল্লিতে মিসায় আটক হন। প্রায় ন’মাস এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলে তাঁকে আটক থাকতে  হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে আলিপুর জেলের মিসডেমিনার সেলে একেবারে একা, নিঃসঙ্গ রেখে চেষ্টা করা হয়েছিল ওঁর মনোবল ভেঙে দেওয়ার। সে চেষ্টা অবশ্যই সফল হয়নি। মুক্তি পাওয়ার পরেই তিনি তাঁর তৎকালীন কর্মক্ষেত্র  আনন্দবাজার পত্রিকার দফতরে হাজির হয়েছেন।  

১৯ জুন, ২০০৮  হঠাৎ ই সমস্ত স্পর্ধায় ইতি টেনে চিরতরে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন সংবাদ জগতের মহানায়ক।  বাঙ্গালির প্রতিবাদ , প্রতিরোধ  ,স্পর্ধা , সত্য বলার দৃপ্ত কন্ঠের অন্য নাম বরুন সেনগুপ্ত। বাঙালিকে সত্য বলার স্পর্ধা যুগিয়েছে তাঁর কাজ। বাংলা ভাষায় সংবাদ মাধ্যমে পরিপুষ্ট করে তুলেছে তাঁর লেখনী। বাংলা ও বাঙালীর কাছে সাংবাদিকতার এক রূপরেখা তৈরী করেছেন তিনি। আজকের সাংবাদিকদের পথ প্রদর্শক হয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন এই বরেন্য ও বর্ষীয়ান সাংবাদিকের কাজ। 

You might also like!